বয়ঃসন্ধি.। ভারী সুন্দর সময়, ভারী বিপজ্জনকও। সন্তান ওই বয়সে পৌঁছলে অভিভাবকদের বেশ কিছু বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ে। ওই বয়সে নানা বদল আসে, শরীরে, মনে, ভাবনায়। হাতছানি থাকে অন্ধকার একটা জীবনেরও। টিন এজের শেষে এসে নেশা করা, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা কিন্তু ভারতের মতো দেশে নতুন নয়। এসব সমাজের অন্য স্তরে ঘটে, আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে এমনটা কখনও ঘটতে পারে না, এই ভেবে মুখ ফিরিয়ে থাকবেন না।
আপনার ছেলে বা মেয়ে একা হয়ে পড়ছে কিনা খেয়াল রাখুন। ছোট পরিবারে আজকাল সন্তানরা বেশির ভাগ-ই সিঙ্গল চাইল্ড মন খুলে কথা বলার সঙ্গী না থাকায় তাঁদের একাকীত্বও গ্রাস করে ফেলে। এভাবেই নেশার প্রথম ধাপ শুরু হয়।
আপনার সন্তানের কাছে মোবাইল ফোনের অ্যাকসেস আছে, নেট আছে, অগাধ তথ্য আছে। আপনার অজান্তে ভার্চুয়াল জগতে সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে, ভাবনা চিন্তা কীভাবে বদলাচ্ছে, নিয়মিত খোঁজ না রাখলে আপনি নাগাল পাবেন না এসবের।
তাই সন্তানের এই স্খলন রুখতে সকলের আগে সচেতন হতে হবে অভিভাবককে। মনোবিদদের মতে, মাদক ও নেশার কবলে পড়া শিশু-কিশোরদের আচরণগত কিছু বদল ঘটে। দু'প্রজন্মের মধ্যে দূরত্বের সুযোগে ঘাঁটি গাড়ছে নেশার চারা।
কেউ কেউ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রথমে কৌতূহলের বশে মাদকের স্বাদ নিতে শুরু করে কিন্তু পরে আর নিজেদের সামলাতে পারে না। তাই নিজেরা বুঝিয়ে পেরে উঠলে তো ভালই, নইলে কাউন্সেলিং করান।
কোন কোন লক্ষণ প্রকাশ পেলে তা একেবারেই অবহেলা করা যাবে না জানেন?
কথায় কথায় বিরক্তি বা রাগ দেখাচ্ছে আপনার সন্তান? কিংবা খুব মুড সুইং হচ্ছে? তা হলে সচেতন হোন। মাদক থেকে তৈরি হওয়া সমস্যার কারণেই এমনটা হয়, তার কোনও মানে নেই। তবু সতর্ক থাকার সময় সবটুকুর জন্যই থাকতে হবে। খাওয়াদাওয়া ও ঘুমের সময়ের উপর নজর রাখুন। ঠিকঠাক খাওয়াদাওয়া না করা, বা সারা রাত জেগে থাকে কিনা, কখনও অবিন্যস্ত কথা বলে কিনা খেয়াল রাখুন।
সন্তানের বন্ধু বান্ধবের সঙ্গেও আড্ডা দিন, গল্প করুন, ওদের মধ্যেও কোনও অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্ম করলে তাঁদের অভিভাবকদের জানান। শুধু নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববেন না।
সন্তানের ব্যবহার করা ফোন ও ল্যাপটপও বন্ধুর মতোই নিয়ে ব্যবহার করুন। আর খুব ছোট খাটো ঘটনায় উত্তেজিত হলে বড় ঘটনা সন্তান আপনার থেকে লুকোবে।
হঠাৎই উল্লেখযোগ্য ভাবে পরীক্ষার ফল খারাপ হতে শুরু করলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন না। নেশা ছাড়াও নানা কারণেই হতে পারে তা। কেন হল তা জেনে সেই মতো ব্যবস্থা নিন।
হাতখরচের পরিমাণ সন্তান বাড়াতে বললে সতর্ক হোন। আর যদি কখনো জানতে পারেন, আপনার সন্তান মাদকাসক্ত, তাহলে শান্ত থেকে মাঠা ঠাণ্ডা রেখে কাউন্সেলিং কোরআন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে, এমন ভাব করবেন না, এতে সন্তানের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জীবনে যে কোনো পরিস্থিতিতেই ঘুরে দাঁড়ানো যায়, আলোর দিকে ফেরা যায়, আপনার সন্তানকে বোঝান। আর সন্তানদের ভালবাসুন, ওদের ভুল শোধরানোর সুযোগ দিন।