দিঘায় মহা ধূমধাম করে উদ্বোধন হচ্ছে জগন্নাথ মন্দির। সেই আবহেই আজ জগন্নাথ মন্দিরের এক রোমহর্ষক গল্প শোনা যাক? তবে দিঘা নয়, এ গল্পের প্রেক্ষাপট পুরীর জগন্নাথ ধাম। এখানেই নাকি খুন হয়েছিলেন চৈতন্য দেব। হ্যাঁ বাংলা যাকে চেনে মহাপ্রভু হিসেবে।
ভাবছেন, কী সব বলছি, চৈতন্য দেব তো পঞ্চ ভূতে বিলীন হয়েছিলেন। কিন্তু না। বহু ঐতিহাসিক এবং গবেষক বিশ্বাস করেন, চৈতন্য দেবকে আসলে খুন করা হয়েছিল। কারা খুন করেছিলেন? কীভাবে? সব বলছি।
পাঁচশ বছর আগের ঘটনা। ১৫৩৩ সাল। চৈতন্য জীবনের শেষ ১৮ বছর কাটিয়েছেন পুরীতে। ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুরীতে আসেন। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। মাঝে কয়েকটা বছর দাক্ষিণাত্যে কাটিয়েছেন মাত্র।
১৫৩৩ -এর ২৯ জুন চৈতন্য দেবের মৃত্যু হয়। কীভাবে? গান গাইতে গাইতে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকেছিলেন নিমাই। সেই প্রথম আর শেষ মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দরজা বন্ধ ছিল। তারপর চৈতন্যকে আর পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিক দীনেশ সেন ‘বৃহৎ বঙ্গে’ বইতে সর্বপ্রথম চৈতন্যদেবকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেন। তিনি সে দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাত আটটা নাগাদ মন্দিরের দরজা খুলে পাণ্ডারা বলেন, মহাপ্রভু স্বর্গে গমন করিয়াছেন, তাঁহার দেহের আর কোন চিহ্ন নাই।
অনেকেই বলেন, যেটুকু সময়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে মন্দিরের ভেতরেই চৈতন্যকে সমাধি দেওয়া হয়।
কেন খুন হয়েছিলেন মহাপ্রভু। হিন্দু ধর্মের গোঁড়ামিকে অস্বীকার করে জাতপাতের ঊর্ধ্বে কথা বলতেন বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক মহাপ্রভু। ক্রমেই তাঁর জনপ্রিয়তা নাকি স্বয়ং জগন্নাথের চেয়েও বেশি হয়ে যায় পুরীতে। নিমাই-এর বৈষম্যবিরোধী এই ধর্মবিশ্বাস নাকি ভাল ভাবে নেয়নি পান্ডারা। কারণ, ভেদাভেদ থাকলে, উঁচু নিচু থাকলে, রাজনীতিতে সুবিধে, ধর্মেও তাই।
এখানেই, শেষ নয়। এই ঘটনার সাড়ে ৪০০ বছর পর চৈতন্য হত্যারহস্যের কিনারা করতে গিয়েও গবেষক জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয় পুরীতে। সরকারি নথিতে তাঁকে আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হলেও স্থানীয় অনেকেই বলেছিলেন, খুন করা হয়েছে জয়দেব বাবুকে। কেন? চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল, গবেষণায় তা প্রমাণিত হলে বদলে যেতে পারে পাঁচশ বছরের ইতিহাস, এবং তাঁর সঙ্গে জুড়ে থাকা ধর্ম এবং রাজনীতি, অথবা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি।