সংবাদমাধ্যম হল গোটা সমাজের দর্পণ। তার কাজই হল প্রশ্ন করা৷ সরকারকে, রাষ্ট্রকে, ক্ষমতাশালীদের তো বটেই, এমনকি নাগরিক সমাজকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার অধিকার যদি সংবাদমাধ্যমের না থাকে, তাহলে কিন্তু বিপদ। বিপদ গণতন্ত্রের, বিপদ গোটা সমাজের। প্রশ্ন করার এই অধিকার সুনিশ্চিত করতে পারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। কিন্তু বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় নানা রঙের শাসকের চক্ষুশূল হয়েছে সংবাদমাধ্যম। কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে তার প্রশ্ন করার অধিকার। চেষ্টা হয়েছে বশংবদ মিডিয়া তৈরি। সেই সব অপচেষ্টা এখনও চলছে বিশ্বজুড়ে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রদীপের মতো জ্বলজ্বল করে একটি তারিখ: ৩ মে। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে। মিডিয়ার স্বাধীনতা রক্ষার শপথে ভাস্বর এই তারিখটি।
প্রতি বছরের প্রেস ফ্রিডম ডে উদযাপিত হয় একটি বিশেষ থিমকে সামনে রেখে। ২০২৪ সালের পৃথিবীতে যখন বিপন্ন প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ, তখন সংবাদমাধ্যমেরই তো দায়িত্ব পরিবেশ রক্ষার লড়াইকে সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য করা। এই বছরের থিম তাই 'আ প্রেস ফর দ্য প্ল্যানেট : জার্নালিজম ইন দ্য ফেস অফ এনভিরনমেন্টাল ক্রাইসিস'। সহজ বাংলায় বললেন, পৃথিবী নামক এই গ্রহটি রক্ষার্থে যে সাংবাদিকতা, তীব্র পরিবেশ বিপর্যয়ের যুগে যে সাংবাদিকতা, এই বছরের ৩ মে বিশ্বজুড়ে তারই উদযাপন।
১৯৯১ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সম্মেলনে প্রথম 'সংবাদমাধ্যমের স্বাাদীনতা রক্ষা দিবস' পালনের কথা ওঠে। দুবছর পর ১৯৯৩ সালল রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা তা অনুমোদন করে। পরের বছর ১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয়ে আসছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নিরিখে আমাদের দেশ ভারতের অবস্থান কিন্তু রীতিমতো লজ্জাজনক। ২০২৩ সালের রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১৬১ তম! ২০২২ সালে আমরা ছিলাম ১৫০ নম্বরে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের জন্য 'এ বড় সুখের সময় নয়'। পাকিস্তান রয়েছে ১৫০ তম স্থানে। গতবার তারা ছিল ১৫৭ নম্বরে। আমাদের আর এক পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কা গতবারের চেয়ে ৯ ধাপে উঠে এসে রয়েছে ১৩৫ নম্বরে।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি সভ্য গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। মিডিয়াকেও যেমন দায়িত্বশীল হতে হবে, তেমনই রাষ্ট্র বা রাজনেতারাও কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার দায় এড়াতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হল সংবাদমাধ্যম। সেই স্তম্ভটি দুর্বল হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গোটা প্রাসাদটাই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে।