আমরা কথায় কথায় বলি, 'স্বপ্নের মতো সুন্দর'। কিন্তু আদতেই কি স্বপ্ন মানেই সুন্দর? একেবারেই নয়। ভালো স্বপ্ন যেমন আছে, ঠিক তেমনই ঘুমের মধ্যে চুপিসারে হানা দেয় ভয়াল, ভয়ঙ্কর সব স্বপ্ন। আমরা শিউড়ে উঠি আতঙ্কে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনের পর দিন যদি ভয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে কিন্তু বিষয়টা রীতিমতো গুরুতর। একেবারেই অবহেলা করার মতো নয়।
প্রথমেই জানা দরকার, আমরা ভয়ের স্বপ্ন দেখি কেন? আসলে স্বপ্ন তো আমাদের সারাদিনের চিন্তার প্রতিফলন। যদি দিনভর খুব ভয়াল কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করি, তাহলে তার প্রভাবে রাতে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়াও প্রবল উদ্বেগ, কাজের চাপ, স্ট্রেস এসব থেকেও ভয়ের স্বপ্ন দেখতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতে ভয়ের স্বপ্ন দেখার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে কোনও বিষয় নিয়ে চিন্তা করা। আমরা যদি কোনও কারণে উদ্বিগ্ন থাকি বা কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে চিন্তা করি সারাদিন, তাহলে প্রভাব পড়তে পারে ঘুমে। দিনেরবেলায় ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্তি, অবসাদ এবং শরীরে এনার্জির অভাব থেকেও এমন হতে পারে। ঘুমের আগে ভয়ের কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, ভয়ের সিনেমা দেখার ফলেও সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ঘুমের মধ্যে নিয়মিত ভয়ের স্বপ্ন দেখা কিন্তু এক ধরণের অসুখ। ডাক্তারি পরিভাষায় প্যারাসমনিয়াও বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যখনই ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না, তখনই মস্তিষ্ক ক্লান্ত হতে শুরু করে। বিভিন্ন বিষয়ে গোলমেলে চিন্তা হানা দেয় মগজে৷ ঘুমের মধ্যে ভয়ের স্বপ্ন দেখার পিছনে এটাও একটি কারণ।
শুধু ঘুম নষ্ট হওয়াই নয়, রাতে ভয়ের স্বপ্ন আরও অনেক ক্ষতি করতে পারে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডনের কিংস কলেজ দ্বারা প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে রাতের দুঃস্বপ্ন এবং হ্যালুসিনেশনের মতো সমস্যাগুলি অটোইমিউন রোগ যেমন লুপাস, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেকে স্বপ্ন দেখেন তিনি আক্রান্ত, তাঁকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এই স্বপ্নগুলি লুপাস, রিউমাটয়েড, স্কোগ্রেনস, আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের লক্ষণ হতে পারে।
স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে গেলে সিগমন্ড ফ্রয়েডের কথা আসবেই। স্বপ্ন নিয়ে তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। ফ্রয়েডের মতে, স্বপ্ন হল ‘মানসিক ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়ার ফসল’। ফ্রয়েড মানব-মনকে সচেতন, অর্ধচেতন এবং অবচেতন— এই তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। তাঁর মতে, ঘুম হল জীবনের অপরিহার্য প্রক্রিয়া বা মানসিক অবস্থা। এই অবস্থায় মানুষের অবচেতন মন, আগে ভাবনাচিন্তা করা বিষয়গুলি বা পুরনো ঘটে যাওয়া ঘটনাক্রম দেখে থাকে। কেমন হয় সেই দেখা? অনেকটা সিনেমার পর্দায় ফেলা আলোকিত ছবির মতো। এবং মানুষ তখন এই প্রক্রিয়াটিকে আসল বলে মনে করেন।
সমাধান কী? নিয়মিত শরীরচর্চা, প্রণায়াম, যোগাসন করলে উদ্বেগজনিত সমস্যা দূর হয়। রাতে ঘুমের ১ ঘণ্টা আগে যোগাসন মাস্ট। ডিনার হালকা করা জরুরি। আর তাতেও সমাধান না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবেই।