Weekend Trip: গা ছমছমে ডাওহিল! মেঘ মুলুকে পাইন সাম্রাজ্য! কেন গা ছমছম করে এই রাস্তায়?

Updated : Nov 18, 2024 10:18
|
Editorji News Desk

জীবনের কোনও না কোনও সময়ে অঞ্জন দত্তের 'মিস্টার হল' গুনগুন করেছেন, অথচ পাহাড়ের কোনও বোর্ডিং স্কুলে পড়ার স্বপ্ন দেখেননি, এমন বাঙালি কমই আছে। আর কার্শিয়ং-এর ডাওহিল, শৈশব কৈশোরের সেই স্বপ্নে দেখা স্কুলের সঙ্গে মেলেনি, এমনটাও হয়নি। ডাওহিল। স্বপ্নের মতো, বা তার চেয়েও সুন্দর পাহাড়ি পথ। যার সঙ্গে জড়িয়ে অনেকটা ইতিহাস আর কিছুটা রহস্য। 

২০০ মিটার দূরত্বে দুটো স্কুল। ডাওহিল গার্লস, আর ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুল।   সবুজের রাজত্বে, পাইন বনের মাঝে দুটো ছবির মতো স্কুল। তবে পাহাড় তো, প্রতি বাঁকেই রহস্য। ১৪০ বছরের পুরনো স্কুলকে ঘিরে কত গল্প কথা। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ডাওহিল চত্বরে নাকি ঘটে নানান অতি প্রাকৃতিক ঘটনা। সেই নিয়ে কত লেখালিখি! ডাওহিলের ছবি তুললে নাকি ফোনের গ্যালারি থেকে বেমালুম গায়েব হয়ে যায় সে সব। আমাদের যদিও সব ছবিই থেকে গেছে, ফোনেও আর মনেও। 

স্কুলের পাশেই ঘন মেঘের সাম্রাজ্যে পাইনের বন। রোদ ঝলমলে দিনেও খুব আলো ঢোকে না সে জঙ্গলে। আলো আঁধারি পরিবেশ। পাইন বন দিয়ে যতোই এগিয়ে যাওয়া, ততোই বুক ঝিম নৈশব্দ। কোথাও পাহাড়ি ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ। দারুণ যুক্তিবাদীর মনও এমন পরিবেশে একটু কেঁপে উঠবে না, তা হয়? পাহাড়ের পরের বাঁকে ঠিক কোন অজানা, অপেক্ষায় আছে, কে জানে! 

পাহাড়ের নানা বাঁকে কুয়াশার আসা যাওয়া দেখতে পাওয়াও দারুণ অভিজ্ঞতা। হাঁটতে হাঁটতে হাঁপিয়ে গেলে একটু জিরিয়ে নেবেন পথে। চোখ বুলিয়ে নেবেন পথের পাশে থাকা চা বাগানের সবুজ গালিচায়। কার্শিয়ং থেকে সূর্যাস্তের নিসর্গ মিস করবেন না। সন্ধে নামার মুখে কানে আসবে দূরের কোনও বুদ্ধ মন্দিরের মন্ত্রোচ্চারণের সুর। 

হোটল বা হোমস্টে ফিরে চোখ রাখুন জানলায়। রাতের শিলিগুড়ি শহর দেখে মনে হবে তারায় ভরা রাত যেন, অনেক নীচের শহরের আলো ঝিকমিক করে জ্বলে সারা রাত। 

কার্শিয়ং-এ দুটো রাত থাকলে মার্গারেট'স ডেকে যেতে ভুলবেন না। দারুণ অভিজ্ঞতা। মার্গারেটস হোপ চা বাগানে জাহাজের ডেকের ধাঁচে বানানো হয়েছে এক চা-কফির ঠেক। নানা রকমের দার্জিলিং চায়ের সম্ভার রয়েছে। যেটা চাইবেন, চলে আসবে ডেকের টেবিলে। কার্শিয়ং এর ভ্যালির মাঝে বসে দার্জিলিং চায়ে চুমুক...জীবনে আর কীই বা না পাওয়া থাকতে পারে, বলুন তো!

ট্রেনে এনজেপি স্টেশনে নেমে বা বিমানে এলে বাগডোগড়ায় নেমে একটা গাড়ি নিয়ে কার্শিয়ং পৌঁছতে সময় লাগবে আড়াই তিন ঘণ্টা। হেমন্ত পেরিয়ে কার্শিয়ং-এ এখন শীতের শুরু। কার্শিয়ং স্টেশন-বাজারের কাছে গুচ্ছের হোটেল-হোমস্টে রয়েছে,আবার হনুমান টপ থেকে আরও অনেকটা ওপরে আপার নয়াবসিতেও খান কয়েক নতুন হোম স্টে খুলেছে, সে সবের কোনওটায় থাকতে পারেন।

 হিল কার্ট রোডে ফটকদাড়ার ওপর কোকরেন প্লেসে থাকতে পারেন। ১০০ বছরের বেশি পুরনো হোটেল, ব্রিটিশ স্থাপত্য, বিশাল বড় বড় কাঠের ঘর, গল্প বলা সব ছবি, নানান মূর্তি আরও কত কী! রাজ্য সরকারের কার্শিয়াং টুরিস্ট লজ বুক করতে পারেন ওয়েস্ট বেঙ্গল টুরিজমের ওয়েবসাইট থেকে। 

কপাল ভাল থাকলে ভোর বেলা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জানলার দিকে চাইলে দেখতে পারেন কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর কপাল মন্দ থাকলে? ধুর! পাহাড়ে আবার কপাল মন্দ হয় নাকি! মেঘলা আকাশ থাকলে ঘন ঘন বদলে যাবে ল্যান্ডস্কেপ। এই পাইনের বনের ফাঁক থেকে মেঘ এসে ঢেকে দেবে চরাচর। মিনিট খানেক পরেই আবার অন্য রূপ।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরে বসে থাকবেন না, সঙ্গে গরম পোশাক নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন যেদিকে দুচোখ যায়। পথে পড়বে মকাইবাড়ি চা বাগান, ক্যাসেলটন চা বাগান। বেলা গড়ালে বাড়ি ফিরবেন চা শ্রমিকেরা। স্কুল ফিরতি পাহাড়ি কচিকাঁচাদের দিকে হাত নাড়ালেই ওরা ফিরিয়ে দেবে সবুজ সারল্য ভরা হাসি। কার্শিয়ং রেল স্টেশনের কাছে রয়েছে বেশ কিছু ভাল বেকারি। সে সবে ঘুরে, কেক, কুকিজ চেখে দেখেও কাটিয়ে দিতে পারেন কয়েকটা ঘণ্টা 

ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত লাগলে থামবেন, কিম্বা কমিয়ে দেবেন চলার গতি। এত তাড়া কীসের? ঝরের বেগে ছুটে চলা সময়কে চলকে চলকে যেতে দেখবেন বলেই না পাহাড় যাওয়া! ফেরার সময় দেখবেন, আপনার থলে ভারী হয়ে গেছে মেঘ-কুয়াশা-আর ভালবাসার স্মৃতিতে। পাহাড় থেকে নেমে আসার আগে, বুক ভরে নিয়ে নেবেন অক্সিজেন। সারা বছরের সম্বল তো ওটাই। 

 

Mountain calling

Recommended For You

editorji | লাইফস্টাইল

ঘটা করে আলাদা দিন, অথচ ছক ভাঙলেই প্রশ্নের মুখে মায়েরা! মাতৃদিবসের কড়া সত্যি এটাই

editorji | লাইফস্টাইল

Digha Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? জেনে নিন রোমহর্ষক কাহিনী

editorji | লাইফস্টাইল

Jagannath: জগন্নাথই কৃষ্ণ, আবার তিনি আদিবাসীদেরও দেবতা! রইল নানা অজানা তথ্য

editorji | লাইফস্টাইল

Darjeeling Day tour: এক দুপুরে দার্জিলিং...বৈশাখের দাপটে পাহাড়ের রানি যেন একটুকরো স্বর্গ

editorji | লাইফস্টাইল

Offbeat Tabakoshi: মিরিকের কাছেই চা বাগানে ঘেরা তাবাকোশি যেন এক টুকরো স্বর্গ