শীতের আয়েশী হাওয়ার ভিতরে জন্ম নেয় কত যে রামধনু! সেখানে উল্লাস আছে। সেখানে উচ্ছ্বাস আছে। আছে অর্থবহ হাসি। আর যা আছে আগলে রাখার মতো করে, তা হল- কেক। বিশেষ করে বড়দিনের (Christmas 2021) সপ্তাহটিতে বাঙালির কেক-প্রেম (Cake) আসমান স্পর্শ করে ফেলে প্রতি বছরই। বহুজাতিক বিপণীর তুমুল চাকচিক্যের পাশেই থেকে যায় পুরনো বেকারির (Old bakeries) নস্টালজিয়া। যুগের পর যুগ ধরে যা শীতকালের বাঙালি-রসনাকে তৃপ্ত করে এসেছে।
নাহুম (Nahoum ans sons)-সালদানহা (Saldanha Bakery)-বড়ুয়া (J N Barua)। কলকাতার কেক-সাম্রাজ্যের অমর-আকবর-অ্যান্টনি। তিন তুরুপের তাস! এই লেখায় আমরা জেনে নেব কীভাবে ইজরায়েল, গোয়া এবং কলকাতা মিশে গেল বাঙালির কেক-প্রীতির মাধ্যমে।
নাহুম অ্যান্ড সনস: বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ঠিক ৩ বছর আগে, ১৯০২ সালে কলকাতায় নিউ মার্কেটে ব্যবসা শুরু হয়েছিল 'নাহুম অ্যান্ড সনস'-এর। শুরু করেন বাগদাদের ইহুদি সাহেব ইজরায়েল নাহুম মোরডেকাই। নাহুমের শোকেস ভরে থাকত তখন পশ্চিম এশিয়ার চিজ় সামোসা, বাকলাভা, ডেট বাবা-র সুবাসে।
বড়দিনে নাহুমের ফ্রুট কেক আর প্লাম কেকের যে সুতীব্র গরিমা, তা কসমোপলিটন কলকাতার ইতিহাসের এক অন্যতম জরুরি অধ্যায়ও বটে। এর মেহগনি কাঠের আসবাব, কাচের বারকোশ বা ম্যাক্রুন, আখরোট ব্রাউনির সুঘ্রাণেই লেখা আছে কলকাতার কয়েক জন্মের চিহ্ন।
সালদানহা বেকারি: নব্বই বছরেরও বেশি পুরনো কলকাতার গোয়ান-বেকারি সালদানহার দেওয়ালের আনাচকানাচ জুড়ে রয়ে গিয়েছে ইতিহাসের ছাপ। ১৯৩০ সালে গোয়ান দম্পতি ইগনেটিয়াস ও উবেলিনা সালদানহার তৈরি এক চিলতে স্বপ্নটি বহরে বেড়ে এখন কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এটি আসলে একটি কেক তৈরির কারখানা। তথাকথিত কেকের দোকান নয়। তবু, প্রতি বছর শীতের এই সময়টায় বাঙালির জিভে এক টুকরো সালদানহার ওয়ালনাট কেক বা কোকোনাট ম্যাক্রুন বা চিজ পাফ না পড়লে যেন আলো ঝলমলে আনন্দের অনেকটাই বাকি থেকে যায়।
জে এন বড়ুয়া: কলকাতার কেক ব্যবসায় সাধারণত অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের প্রাধান্য থাকলেও, দীর্ঘ ৯০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঙালির মুখে হাসি ফুটিয়ে আসছে বড়ুয়ার কেক। আমবাঙালির অতি প্রিয় টিফিন কেকের স্রষ্টাও এঁরাই।
পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় পা রেখে যে বেকিং ব্যবসা শুরু করেছিলেন মনোতোষ বড়ুুয়া, তা আজও চলছে তাঁর দুই উত্তরাধিকার সুধীর বড়ুয়া ও মনোরঞ্জন বড়ুয়ার হাত ধরে। বস্তুত, 'বড়ুয়া কেক' হিসেবে যে জিনিসটির খ্যাতি দুনিয়াজোড়া বাঙালির মধ্যে, তা এঁদের হাতেই তৈরি।
ব্যবসায় আগের রমরমা আর নেই। তবু, বাঙালির আবেগের দাম দিতে আজও স্বল্প মূল্যেই পাওয়া যায় পুরনো সেই কেকের স্বাদ।