Tea Heritage of Bengal: বিশ্ববিখ্যাত 'দার্জিলিং-চা'-এর জন্ম কিন্তু ব্রিটিশদের হাতে, মাত্র ১৫০ বছর আগে

Updated : Nov 08, 2024 12:26
|
Editorji News Desk

আড্ডা, গান, গল্প, সবেতেই বাঙালির ‘চা’ই চাই! সকালে ঘুম চোখে গলাটা একটু ভিজিয়ে নিতে কিমবা কাজের মাঝে একটু চাঙ্গা হতে চা-এর বিকল্প আর কী আছে? চা-এর সঙ্গে বাঙালি তথা ভারতীয়দের রোমান্সটা চিরকালীন। রাজনীতি থেকে রাজকার্জ, কিমবা ফুটবল থেকে ফ্যাশন, সব মহলেই অবাধ বিচরণ তার।

ভারতের নানা প্রান্তে নানা রকমের চা জনপ্রিয়। সাধারণত উত্তর ভারতের মানুষ পছন্দ করে বেশ মশলাদার চা। ঘন দুধ দিয়ে জ্বাল দেওয়া। সঙ্গে লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা থাকলে তো কথাই নেই। তবে চায়ের সমঝদাররা মূলত পছন্দ করেন দুধ চিনি ছাড়া লাল চা। কতটা লাল হবে? চা ভেদ করে পাত্রের একেবারে তলা পর্যন্ত দেখা গেলে, সেটাই আদর্শ চা। 

এবার এই চা বানানোর একটা পদ্ধতি রয়েছে। ভাবছেন, এত কিছু থাকতে নতুন করে চা বানানো শেখাচ্ছি। হ্যাঁ, কারণ, চা-এর ফ্লেভার নিয়ে যারা খুব শৌখিন, তাঁরা জানেন খুব দামি চায়ের ফ্লেভারও সবার হাতে আসে না। চা-এর আসল স্বাদ পেতে হলে বানানোর জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে। 

১৫০ মিলিলিটার জল (একজনের জন্য) ফুটিয়ে গ্যাস নিভিয়ে তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি এলেই সঙ্গে সঙ্গে সেই জলে চার গ্রাম চা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে চা পাতা সমেত জল। এবার চার মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখে নিতে হবে চা পাতাগুলি পুরোপুরি 'খুলেছে' কিনা। এবার ছাঁকনি নিয়ে ছেঁকে নিয়ে কাপে ঢাললেই... স্বর্গ। দার্জিলিং এবং আসাম চা দুইই কিন্তু দুধ-চিনি ছাড়াই খাওয়া উচিত। স্বাদ সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায় তাতেই।

বাঙালির আবার দিনের নানা সময়ে নানা স্বাদের চা না হলে বুদ্ধিটা ঠিক খোলে না। চা হতে হবে নিখুঁত। আর তা না হলেই মেজাজ যাবে বিগড়ে। 'বাজে' চায়ে চুমুক দিতে হতে পারে, এই চিন্তাটাই আপনার দিন খারাপ করার পক্ষে যথেষ্ট। এবং চা মনমতো হলো না, এই আতঙ্কের পোশাকি নাম 'টেপিডোফোবিয়া'!

তা, এই চা বাংলা এল কবে? ব্রিটিশদের হাত ধরে চা শিল্প প্রথম গড়ে ওঠে দার্জিলিং-এ। তাও মাত্র উনিশ শতকের মধ্যভাগে। চিনের একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করতেই দার্জিলিং-এ প্রথম চা-এর ফলন শুরু করলেন ব্রিটিশরা। এরপর আস্তে আস্তে আসাম এবং দক্ষিণ ভারতে শুরু হয় চা-এর ফলন। দু'শ বছরেরও কম সময়ে দার্জিলিং চএর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়েছে গোটা দুনিয়া। কুইন অফ হিলস এর মকাইবাড়ির বাগানের চা বিক্রি হয় রেকর্ড দামে। কোনও কোনও বছর প্রতি কেজির দাম পৌঁছে যায় কয়েক লক্ষ টাকা। এই সেদিন অবধি ব্রিটেনের রানি কুইন এলিজাবেথ চুমুক দিতেন যে চায়ে, তা তো আমাদের বাংলার দার্জিলিং চা-ই! 

চা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ণিমা রাতে চা গাছের পাতা তুললে সেই চায়ের স্বাদ নাকি সবচেয়ে বেশি। এলিজাবেথের চাও এভাবেই তোলার চল ছিল, দার্জিলিং-এর মকাইবাড়ি চা বাগান থেকে। 

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নানা দেশের চা কাহন

চিন দেশেই প্রথম চায়ের জন্ম। খ্রিষ্ট পূর্ব ২৭০০ বছর আগে এক চিনা রাজা বাগানে বসেছিলেন, তাঁর আর্দালি রাজার জন্য জল ফোটাচ্ছিলেন, বাগানের কোনও এক পাতা পরে গিয়েছিল সেই জলে। তাঁর স্বাদ রাজার মনে ধরেছিল। ভাগ্যিস ধরেছিল। তা নাহলে সারা পৃথিবী বঞ্চিত থেকে যেত এই জাদু পানীয় থেকে। 

চা -এর জনপ্রিয়তা কিন্তু চিন থেকে ক্রমশ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।চিনে আবার চা কিন্তু ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। 

বুদ্ধ ধর্মের সঙ্গে চা-এর এক নিবিড় যোগ রয়েছে। জাপানে এই ধর্মের আধিপত্য রয়েছে। সেখানকার সংস্কৃতিতে মিশে রয়েছে এক টি ফেস্টিভাল। জাপানে গ্রীন টি পাউডারের চল রয়েছে, ওই পানীয় সেখানে 'মাচা' নামে পরিচিত। 

তিব্বতে বিখ্যাত বাটার টি। চায়ে মাখন এবং নুন দিয়ে পান করেন তিব্বতিরা। 

ইরানে চা পানের চল পঞ্চাদশ শতক থেকে। 'চায়খানে' শব্দটার জন্ম মধ্যপ্রাচ্যেই। রুপোর পাত্রে চা পরিবেশন করা হতো ইরানে। 

মরক্কোর সংস্কৃতিতে জড়িয়ে মিন্ট টি। সে দেশে কোনও বাড়িতে অতিথিতে তিনবার চা দেওয়া হয়। প্রথমবার জীবনের কথা ভেবে, দ্বিতীয়বার ভালবাসার জন্য। শেষ কাপটা, মৃত্যুকে মনে রেখে। প্রতি কাপ চা যেন জীবনের এক একটা অধ্যায়। 

'চা' , বাংলা অভিধানের সবচেয়ে ছোট শব্দগুলোর একটা। অথচ তাঁর ব্যঞ্জনা কতোটা। কারোর জীবনে বন্ধু, কারোর সঙ্গী, কারোর শখ, কারোর নেশা, কারোর পেশা, কারোর আবেগ, কারোর জীবনের আবার ব্যাকগ্রাউন্ট মিউজিক! এক কাপ চা তো নয়, পেয়ালা উপচে পরা অনুভূতি যেন!

 

Tea

Recommended For You

editorji | লাইফস্টাইল

ঘটা করে আলাদা দিন, অথচ ছক ভাঙলেই প্রশ্নের মুখে মায়েরা! মাতৃদিবসের কড়া সত্যি এটাই

editorji | লাইফস্টাইল

Digha Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? জেনে নিন রোমহর্ষক কাহিনী

editorji | লাইফস্টাইল

Jagannath: জগন্নাথই কৃষ্ণ, আবার তিনি আদিবাসীদেরও দেবতা! রইল নানা অজানা তথ্য

editorji | লাইফস্টাইল

Darjeeling Day tour: এক দুপুরে দার্জিলিং...বৈশাখের দাপটে পাহাড়ের রানি যেন একটুকরো স্বর্গ

editorji | লাইফস্টাইল

Offbeat Tabakoshi: মিরিকের কাছেই চা বাগানে ঘেরা তাবাকোশি যেন এক টুকরো স্বর্গ