চিকিৎসকের কি আবার লিঙ্গভেদ হয় নাকি? ডাক্তার তো ডাক্তারই, সে তিনি পুরুষ হোন বা মহিলা, তফাত তো কিছু নেই! মোটেই না৷ আলবাত তফাৎ আছে৷ অন্তত প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তো আছেই৷
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, মহিলা চিকিৎসকরা চিকিৎসা করলে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। যাঁরা প্রথমে ভর্তি হচ্ছেন, নারী চিকিৎসকরা তাঁদের চিকিৎসা করলে প্রাণ বাঁচানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় ৪ শতাংশ। যাঁরা রিঅ্যাডমিশন নেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আরও বেশি- ৫ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রবীণ নাগরিকরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে যদি মহিলা চিকিৎসকরা চিকিৎসা করেন, তাহলে তাঁদের মৃত্যুর হার অনেকখানি কমে যায়। যাঁরা হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কিছুদিন পরে আবারও ভর্তি হন, তাঁদের ক্ষেত্রেও কথাটা একই রকম সত্যি। গবেষকরা ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের এক মিলিয়ন প্রবীণের চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই সমীক্ষা করেছেন।
হার্ভার্ড টি এইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ইউসুকে সুগাওয়া বলেছেন, এই সমীক্ষার ফল সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো।
অ্যানালস অফ ইন্টার্নাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, মহিলা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা মহিলা রোগীর মৃত্যুর হার ৮.১৫ %। পুরুষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা মহিলা রোগীর মৃত্যুর হার ৮.৩৮ %। পুরুষ রোগীদের পরিসংখ্যানও জানা যাক। রোগী পুরুষ হলে এবং তাঁর চিকিৎসক মহিলা হলে মৃত্যুর হার ১০.১৫ %। চিকিৎসক যদি পুরুষ হন, সেই ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার ১০.২৩ %।
২০১৬ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ৭,৭৬০০০ মানুষ এই সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৪,৫৮,১০০ জন মহিলা রোগী।
গবেষণা বলছে, মহিলা চিকিৎসকেরা মহিলা রোগীদের সঙ্গে বেশি যত্ন সহকারে কথা বলেন, কথা শোনেন। রোগীদের মেডিক্যাল রিপোর্ট অনেক বেশি মন দিয়ে দেখেন। তাছাড়া মহিলা চিকিৎসকদের কাছে মহিলা রোগীরা পরীক্ষা, নিরিক্ষা এবং অন্যান্য ব্যাপারে অস্বস্তি কম পান, ফলে চিকিৎসায় সুবিধে হয়।
প্রায় সব গবেষকই একটি ব্যাপারে সহমত। মহিলা এবং পুরুষ চিকিৎসকদের চিকিৎসার পদ্ধতি, রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ধরন আলাদা হয়।
এই গবেষণার পাশাপাশি আমাদের দেশের ছবিটাও একটু উল্লেখ করা দরকার। ভারতবর্ষে চিকিৎসকদের মধ্যে মাত্র ২৯ % মহিলা। নার্সিং পেশায় অবশ্য মহিলাই বেশি, ৮০ %, আশা কর্মীদের আবার ১০০ শতাংশই মহিলা। চিকিৎসকদের স্পেশালাইজেশনের ক্ষেত্রে আবার গাইনোকলজি বা প্যাথোলজিতেই মহিলা চিকিৎসকদের চাহিদা বেশি। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে ভারতে লিঙ্গ ভেদ খুবই প্রকট। সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, এরকম যে কোনও পেশায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব পুরুষদের তুলনায় অনেক কম মহিলাদের। এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মহিলাদের বেতনও পুরুষদের তুলনায় ৩৪ % কম।