Puri Mahabhog: দর্শনেই পুণ্য, কেন দেওয়া হয় ৫৬ ভোগ, কী কী নিয়ম মেনে রান্না হয় মহাপ্রসাদ? রইল পুরীর কাহিনি

Updated : Jul 06, 2024 06:56
|
Editorji News Desk

দেশের মধ্যে সর্বপ্রাচীন এবং সর্ববৃহৎ রথ যাত্রা আয়োজিত হয় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে| জগতের ‘নাথ’ জগন্নাথ, পুরাণ মতে তিনি জগন্নাথ | কৃষ্ণের অংশ এবং বিষ্ণুর অবতার | কথিত রয়েছে, বদ্রীনাথ ধামে স্নান করেন জগন্নাথ, পোশাক পরেন দ্বারকায়, আর ভোজন সারেন পুরীর ধামে| মহাসমারোহে ছাপ্পান্ন পদে সাজিয়ে দেওয়া হয় ভগবান জগন্নাথের ভোগের থালা| শুধু দেবতা দর্শন নয়, বিশ্বাস সেই ভোগ দর্শনেও মেলে পুণ্য | সারাটা দিন ধরে জগন্নাথ দেবের ভোগ রান্না হয় প্রথা মেনে পুরীর মন্দিরে| তারপর সেই প্রসাদ বিতরণ করা হয় ভক্তদের মধ্যে| 


সেই অমৃত ভোগ রান্নার নানা নিয়ম কানুন রয়েছে, এই ছাপান্ন পদ তৈরির পিছনে কথিত আছে এক কাহিনিও| আজ এডিটরজির বাংলার পর্দায় রইল জগন্নাথের ভোগ রান্না থেকে শুরু করে তার আচার, নিয়ম কানুন| 


জানেন কেন ছাপান্ন পদ রেঁধেই ভোগ দেওয়া হয়? 

আসলে এই বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি| শ্রীকৃষ্ণের লীলার  সঙ্গে জগন্নাথ দেবের মহাভোজের সম্পর্ক রয়েছে | বাল গোপাল ছিলেন খুব ছটফটে, সারাদিন মাঠে ঘাটে চড়ে বেড়াতেন তিনি| তাই তাঁর খিদেও পেত| মা যশোদা তাঁকে অষ্টপ্রহর নানা পদ রান্না করে খাওয়াতেন | একবার , ইন্দ্রদেব কৃষ্ণের উপর রুষ্ট হয়ে বৃষ্টিতে ভাসিয়ে দেন ধরাধাম| আর তাতে জনমানুষের বেজায় বিপদ দেখে  মহাপ্রলয় থেকে সকলকে রক্ষা করতে সাত দিন কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন | তার নিচেই আশ্রয় নেয় জনজাতি| সাতদিন পর প্রলয় বন্ধ হলে পাহাড় নামান তিনি | সেই সাতদিন তাঁর কিছুই খাওয়া হয়নি বলে সাতদিন অষ্টপ্রহরের আট রকমের পদ অর্থাৎ ছাপান্ন পদ রান্না করে ভোগ দেন| সেই থেকেই প্রথা মেনে এই ছাপান্ন ভোগের আয়োজন চলে আসছে | 


শঙ্খুড়ি ও শুখুলি: 


সকাল থেকে রাত অবধি মহাসমারোহে সাজিয়ে বিগ্রহকে মোট ৬বার ভোগ দেওয়া হয়। ৫৬ পদে সাজিয়ে দেওয়া হয়। জগন্নাথকে ভোগ নিবেদনের নানা রকমের নিয়ম কানুন রয়েছে| যেমন বাইরের কোনও জিনিস ভোগে ব্যবহার করা যায় না| মূলত দুই ধরণের খাবার দেওয়া হয় ভোগে, ভাত ডাল তরকারি খিচুড়ি জাতীয় খাবার, যাকে বলা হয় শঙ্খুড়ি| আর দেওয়া হয় চিরে, মুড়ি, গজার মতো শুকনো খাবার যাকে বলা হয় শুখুলি| 


ভোগ রান্নার পদ্ধতি: 

৭৫২টা উনুনে ৪০০ জন মিলে জগন্নাথদেবের ভোগ রান্না করেন| বলা হয় এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রান্নাঘর| প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জন্য প্রসাদ তৈরি হয় পুরীর রান্নাঘরে | ভোগ রান্না হয় মাটির হাঁড়িতে| প্রতিটি উনুনের একটি করে বড় মুখ থাকে| সবচেয়ে বড় মাটির হাঁড়িতে বসানো হয় ভাত, তারপর একে একে তারউপর প্রায় সাতটি ছোট হাঁড়িতে বাকি তরিতরকারি রান্না হয় | 


ভোগে ব্যবহার হয় না কী কী? 


 মূলত ফুটন্ত জলে সবজি এবং মশলা দিয়ে মহাপ্রভুর ভোগ রান্না করা হয় | ভোগে ব্যবহার করা হয় না আলু, পেঁপে, কাঁচা লঙ্কা, বিট, ভুট্টা, মটরশুঁটি, বাঁধাকপি, গাজর, ধনে পাতা, বিন, ক্যাপসিকাম, করলা, ঢেঁড়শ ও শশার মতো সবজি| মনে করা হয় এগুলি বিদেশি সবজি| বদলে রান্না হয়, রাঙ্গাআলু, পটল, কাঁচকলা, কাঁকরোল ইত্যাদি দিয়ে| মশলা বলতে শুধু নুন আর হলুদ, তেলের বদলে ঘি এবং চিনির বদলে গুড়| আর এতেই নাকি অমৃত হয়ে ওঠে প্রসাদের স্বাদ| 

জানেন এই দিন কী কী ভোগ দেওয়া হয় জগন্নাথ দেবকে?

খিচুড়ি- চাল, ডাল এবং ঘি দিয়ে এই খিচুড়ি তৈরী করা হয়। এই প্রসাদ পেতে দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন পুরীর ধামে।

সান্তুলা- ভোগের বিশেষ একটি পদ সান্তুলা, অল্প তেলে ঘি পাঁচফোড়ন কাঁচালঙ্কা ফোড়ন দিয়ে এই তরকারি রান্না হয়।

ঝিলি ও রসাবলি - পুরাণ মতে জগন্নাথ দেব মিষ্টি খেতে ভালবাসতেন। রসাবলি হল দুধে ভেজানো মালপোয়া, আর ঝিলি একধরণের মিষ্টি জাতীয় প্যানকেক জাতীয় খাবার। এছাড়াও খাজা, গজা, খই, মুড়কি জাতীয় শুকনো খাবার থাকে ভোগে।

 


এই ভোগ দর্শনের জন্যও প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে পুরীর মন্দিরে | 

Puri

Recommended For You

editorji | লাইফস্টাইল

ঘটা করে আলাদা দিন, অথচ ছক ভাঙলেই প্রশ্নের মুখে মায়েরা! মাতৃদিবসের কড়া সত্যি এটাই

editorji | লাইফস্টাইল

Digha Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? জেনে নিন রোমহর্ষক কাহিনী

editorji | লাইফস্টাইল

Jagannath: জগন্নাথই কৃষ্ণ, আবার তিনি আদিবাসীদেরও দেবতা! রইল নানা অজানা তথ্য

editorji | লাইফস্টাইল

Darjeeling Day tour: এক দুপুরে দার্জিলিং...বৈশাখের দাপটে পাহাড়ের রানি যেন একটুকরো স্বর্গ

editorji | লাইফস্টাইল

Offbeat Tabakoshi: মিরিকের কাছেই চা বাগানে ঘেরা তাবাকোশি যেন এক টুকরো স্বর্গ