কলকাতা নামটা শুনলেই যে সব ছবি ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে, তার মধ্যে ট্রাম থাকবেই থাকবে। তিলোত্তমার সঙ্গে সমার্থক হয়ে উঠেছিল ট্রাম। ১৫১ বছরের ইতিহাসে ইতি পড়ছে। কলকাতার বুক থেকে বিদায় নিচ্ছে ট্রাম। গতি কমছিল, এবার থেমে আসার পালা। একটা শহরের অস্তিত্বের অংশ হয়ে ওঠা থেকে, বাতিল হয়ে যাওয়া দেড় শতকে সম্পূর্ণ হলো একটা বৃত্ত। আরও অনেক কিছুর মতো অতীত হওয়ার পথে কলকাতার ট্রাম।
কলকাতার বয়স বাড়ছে, বুড়ো হচ্ছে শহর, অভিজ্ঞতা যেমন বাড়ছে, রোজ পুরনো কত কিছু বাতিল হচ্ছে একটু একটু করে। দম দেওয়া দেওয়াল ঘড়ি, দোতলা বাস, টেলিগ্রামের মতো হারিয়ে যাচ্ছে ট্রাম।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৩। কলকাতার রাজপথে প্রথমবার চলল ট্রাম। শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। ১৮৮০-র ২৭ নভেম্বর কলকাতায় ঘোড়ায় টানা ট্রামের চলাচল শুরু হয়। বর্তমানের যে বিদ্যুৎচালিত ট্রাম শহরবাসী দেখতে অভ্যস্ত, তা শুরু হয় ১৯০২ সালে। দেড়শো বছর, নেহাত কম সময় নয়। বাঙালির গান, সাহিত্য, প্রেম, এবং আরও অনেক কিছু জুড়েই ছড়িয়ে ছিল ট্রাম।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পরে, শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও শ্যামবাজার-ধর্মতলা রুটে শেষ যে দু'টি ট্রাম চলত, তাও বন্ধ করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
আগামী প্রজন্ম কি আর চোখেও দেখতে পাবে না এই যান? তেমনটা যাতে না হয়, সে জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান জয় রাইডের ব্যবস্থা করা হবে। রাস্তা বাড়েনি, কিন্তু যান বেড়েছে, তাই অপেক্ষাকৃত ধীর গতির ট্রামকে জায়গা করে দিতে হচ্ছে দ্রুত গতির বাস, ট্যাক্সিকে।
ডারউনের তত্ত্ব সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট। সময়ের চোখে যোগ্যতমই জায়গা করে নেই। কিন্তু এই আধুনিক সময়ে এই দ্রুত আরও দ্রুত বেঁচে থাকায় কে ঠিক করবে যোগ্যতম কে? ট্রামের গতি ধীর কিন্তু দূষণও কম। কিন্তু পরিবেশের চেয়ে সময়ের পাল্লাই যে ভারী হল। আরও অনেকটা স্মার্ট হল কলকাতা। নস্ট্যালজিয়ার ঝোলা আরও পূর্ণ হলো। তবু ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটা গেল না পথ।