আজ মহালয়া । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে ঘুম ভেঙেছে বাঙালির । পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনা হল । বেজে উঠেছে আগমনী সুর । বাঙালির দুর্গাপুজো শুরু হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণের চণ্ডীপাঠ শুনেই । তাঁকে ছাড়া মহালয়ার ভোর যে অসম্পূর্ণ । ১৯৩২ সালে আকাশবাণীতে প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল মহিষাসুরমর্দিনী। জানা গিয়েছে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মহালয়ার আগের দিন রাতে রেডিও স্টেশনে থেকে যেতেন। ভোরে অনুষ্ঠান শুরুর আগে স্নান করে গরদের ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরে চণ্ডীপাঠে বসতেন তিনি । তারপরই রেডিওতে বেজে উঠত মহিষাসুরমর্দিনীর সুর, আগমনীর সুর... আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির... ।
মহালয়া ভোর । ভোর থেকেই রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ঘাটে শুরু হয়ে গিয়েছে তর্পণ । বাবুঘাট থেকে বাগবাজার...সর্বত্র থিকথিকে ভিড় । শুধু বড় বড় ঘাট নয়, ছোট ছোট নদী বা পুকুর ঘাটগুলিতেও তর্পণ সারছেন বাঙালি । সনাতন ধর্মে চোদ্দ পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের দিন । ধর্মের ব্যাখ্যা বলে, মহালয়ার এই পুণ্য তিথিতে মর্ত্যলোকে আসেন পূর্বপুরুষদের আত্মা । তাঁদের স্মরণ করেই হয় উৎসবের সূচনা ।
মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও এক রীতি। এই বিশেষ দিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়ার দিন, কাকভোরে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে শিল্পী কুশের অগ্রভাগ দিয়ে দেবীর তৃতীয় নেত্র অঙ্কন করেন। তারপর আঁকেন বাঁ ও ডান চোখ ।
এখন তো মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয়ে যায় পুজো । দেবীপক্ষের সূচনায় শহর ও রাজ্যের বড় বড় পুজো মণ্ডপগুলির উদ্বোধন হয়ে যায় । মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় ঠাকুর দেখা । অফিসে শেষেই ফাঁকায় ফাঁকায় ঠাকুর দর্শনে বেরিয়ে পড়েন অনেকে ।
অশান্ত একটা সময়ে উৎসবের সূচনা হচ্ছে । আর জি করের নির্যাতিতা এখনও বিচার পাননি । দেবীপক্ষের সূচনায় একটাই প্রার্থনা বিচার হোক, দোষীদের শাস্তি হোক, আর এ বাংলার বুকে, পৃথিবীর বুকে যেন আরও একটা আরজি কর না হয় । অন্ধকার কেটে যেন আলো হয়ে ওঠে সকলের জীবন ।