মহালয়ার ভোর । রেডিওতে বাজছে আগমনীর সুর । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে দেবীপক্ষের সূচনা হয় বাঙালির । ঘাটে ঘাটে চলে তর্পণ । এটাই মহালয়ার চিরাচরিত ছবি । তবে,মালদার ইংরেজবাজারের দুর্গাবাড়ি মোড়ের বাসিন্দাদের কাছে মহালয়ার ভোর হয় একটু অন্যরকম । এক অলৌকিক মুহূর্তের সাক্ষ্মী থাকেন তাঁরা । মহালয়ার ভোরে নাকি দুর্গাবাড়ির আদি কংসবনিক মন্দিরে শোনা যায় নুপুরের আওয়াজ। মন্দিরের ভিতর অদ্ভুত এক ছায়াও নাকি দেখেছেন অনেকে । ভক্তদের বিশ্বাস, তিনিই দেবী দুর্গা । মহালয়ার দিনই দেবীর আগমন হয় ।
ইংরেজবাজারের আদি কংসবণিক সম্প্রদায়ের দুর্গা মন্দিরটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো । চিরাচরিত নিয়ম মেনেই পুজো হয়ে আসছে এখানে । দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গিয়েছে । তাই, এখন মন্দির প্রাঙ্গণে জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে । সেজে উঠছেন দেবী । সাজছে মন্দির প্রাঙ্গণ । দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে চার দিন ধরে মেলা বসে দুর্গাবাড়ি মোড়ে । এই পুজোর পিছনে রয়েছে একটা ইতিহাস ।
ইতিহাস
১৯৭১ সালে মালদার দুর্গাবাড়ি এলাকায় বসতি গড়ে তোলেন বণিক সম্প্রদায়ে সদস্যরা । পরবর্তী সময়ে জমিদার ওই সম্প্রদায়ের মানুষজনদের হাতে একটি গোলাকার পদ্মচক্রটি তুলে দেন। এই পদ্মচক্রটির পিছনেও একটা ইতিহাস রয়েছে । প্রায় ৩০০ বছর আগের একদিন ফুলবাড়ি মহানন্দা নদীর নিমতলা ঘাটে এক বৃদ্ধা স্নান করছিলেন ।সেই সময়ে গোলাকার পাথরের এক পদ্মচক্র কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তিনি। এরপর ওই বৃদ্ধা নাকি চণ্ডীরূপী দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। পাথরের ওই গোলাকার পদ্মচক্র পুজো করার কয়েক বছর পর ওই বৃদ্ধা প্রয়াত হন। তার আগে তিনি তৎকালীন জমিদার গিরিজানন্দ দাসকে গোলাকার পদ্মচক্র তুলে দিয়ে যান । সেই পদ্মচক্র বণিক সম্প্রদায়ের হাতে তুলে দেন । এরপর ১২৩৫ বঙ্গাব্দে দুর্গাবাড়িতে মণ্ডপ তৈরি করেন আদি কংসবণিক সম্প্রদায়ের লোকজন । শুরু হয় পাথরের পুজো। এরপরই স্বপ্নাদেশে দেন দেবী । তারপর চণ্ডীমন্ত্রে পুজো শুরু হয়। সেই থেকেই পুজো হয়ে আসছে প্রাচীন মন্দিরে ।
পুজোর বিশেষত্ব
আদি কংসবণিক মন্দিরের পুজোর নৈবেদ্যের জোগাড় শুধুমাত্র পুরুষেরাই করেন। মহিলারা পুজোয় আনন্দ উৎসবেই ব্যস্ত থাকেন। দেবী দুর্গার ভোগ হিসেবে পায়েস, মালপোয়া, পান্তুয়া-সহ হরেক রকমের মিষ্টি দেওয়ার প্রচলনও রয়েছে। দশমীর দিন মাচা করে দেবী দুর্গাকে নিয়ে কংসবণিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিয়ে যান মহানন্দা নদীর নিমতলা ঘাটে । তারপর নৌকা করে দেবী দুর্গাকে ঘুরিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয় ।
দুর্গাবাড়ি মোড়ে বর্তমানে বণিক সম্প্রদায়ের প্রায় ২০০টি পরিবারের বাস রয়েছে । তাঁরা সবাই মিলে পুজো করেন । বহু দূর থেকে প্রাচীন মন্দিরের পুজো দেখতে আসেন ভক্তরা ।