"যে ভাষার জন্য, এমন হন্যে, এমন আকুল হলাম, সে ভাষাতে আমার অধিকার"!- কবীর সুমন
আমাদের অধিকার ছিল, বাংলা ভাষায়। কিন্তু অযত্ন না অন্য ভাষার আগ্রাসন? ঠিক কোন কারণে বাংলার গায়ে ধুলো পড়ল, অবহেলিত হয়ে পড়ল বাংলা, এ আলোচনা ভাষা দিবসের আগে-পরে প্রতিবছর-ই হয়, তারপর আবার যে কে সেই।
এই ভাষা দিবসে বরং কিছু বদলে যাওয়া বাংলার ব্যবহার এডিটরজি বাংলার দর্শক-পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম আমরা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিপি বদলালেই ভরে যায় প্রশংসায়। সে সবের মধ্যে দু-একটি প্রতিক্রিয়া খুব চেনা হয়ে উঠেছে, 'কী দারুণ লাগছিস'। অথবা 'কী কিউট লাগছো, দুজনেই। ও মা! লাগছো, লাগছিস, এভাবে কবে থেকে ব্যবহার করতাম আমরা। বলা হতো, কী ভাল লাগছে তোকে/ তোমাকে বা আপনাকে।
ভাষাবিদ পবিত্র সরকার মনে করছেন, শব্দের এরকম ব্যবহার এখনও পর্যন্ত ভুল-ই। তবে ভাষায় বিদেশি ভাষার প্রভাব পড়ছে, এবং সেই প্রভাব আগেও ছিল, সব ক্ষেত্রে সেই প্রভাব আটকানোও যায় না, মনে করছেন পবিত্র বাবু।
হিন্দির 'কিউ কি' বাংলায় 'কেন কী' হয়েছে বহুকাল আগেই। বহু ব্যবহারে, কেন-কী আর কানে লাগছে না বরং কেন না- ব্যবহার করতে গেলেই দশবার ভাবতে হচ্ছে, এও তো অস্বীকার করা যায় না।
কাঁদলাম না বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় 'কান্না করলাম' এর মতো ব্যবহার বেশি চোখে পড়ছে। নজর এড়ায়নি আধুনিক বাংলা সঙ্গীতের রূপকার কবীর সুমনের। কবীর বলছেন, শুধু ভাষা না, যে কোনও ভাষার প্রতিই যত্নের বড় অভাব এই সময়ে। কথার মাঝে কোথায় 'আচ্ছা' ব্যবহার হবে, কোথায় 'বেশ', সব যেন কেমন গুলিয়ে গিয়েছে। প্রশ্নের উত্তরে 'আচ্ছা'র বদলে 'বেশ'-এর আধিক্য যেন সার্বিক অর্থই বদলে দিচ্ছে, 'সম্মতি'র বদলে 'শ্লেষ' অভিব্যক্ত হচ্ছে। গানওয়ালা বলছেন, "বড় বেশি স্মার্ট হতে গিয়ে ভাষাকে অবহেলা করছি আমরা"।
খবরের কাগজে বেরিয়েছিল না বলে আমরা বলছি খবরটা কাগজে এসেছিল তো (হিন্দিতে যাকে বলে খবর মে আয়া হ্যায়"। এই যে সরাসরি হিন্দি থেকে বাংলা করে নিয়ে বাংলা ভাষায় শব্দের ব্যবহারটাই বদলে দেওয়া, এটাকে কেমন চোখে দেখছেন, শিল্পী অনুপম রায়? অনুপম মনে করছেন, যে কোনও সময়েই ভাষার সঙ্গে রাজনীতি এবং অর্থনীতির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে। যে ভাষার ক্ষমতা বেশি, তার প্রভাব অন্য ভাষার ওপর পড়াই স্বাভাবিক। ৯৫% মানুষের, একটা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার দায় থাকবে না। কিন্তু বাকি ৫ %-কে সেই চেষ্টাটুকু চালিয়েই যেতে হবে। বাংলায় ভাল কাজ করেই দৃষ্টান্ত তৈরি করতেই হবে।