বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। না, মানুষের জন্য এই ভাবনা সুন্দর, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে ঐক্য না থাকলেও বৈচিত্র রয়েছে, এবং তা সুন্দর। এবং এই বৈচিত্র ভীষণ ভাবে জরুরিও। ২২ মে দিনটি সারা দুনিয়ায় উদযাপিত হয় বিশ্ব জৈব বৈচিত্র দিবস হিসেবে।
২০২০ সাল থেকে এই দিনের উদযাপন হয়ে আসছে। জৈব বৈচিত্র এতিটুকু কমে গেলে তা মানব সভ্যতার জন্যেও সংকটের। কাকে বলে জৈব বৈচিত্র? বিপুলা এ পৃথিবীতে যেখানে যেখানে প্রাণের সঞ্চার, তার সবটুকু নিয়েই জৈব বৈচিত্র। এই জৈব বৈচিত্রেরই অংশ মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, আবার নাম না জানা কত লক্ষ লক্ষ প্রাণি।
এ বছরের আন্তর্জাতিক জৈব বৈচিত্র দিবসের থিম “Be part of the Plan”। সারা বিশ্বের জৈব বৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদেরও কিছু করণীয়, প্রত্যেকের। সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে এই দিন।
জৈব বৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখা কেন দরকার?
মানুষ ছাড়া এই পৃথিবীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণ বাঁচল, না হারিয়ে গেল, কিম্বা গোটা প্রজাতিই বিলীন হয়ে গেল, তা নিয়ে আমরা উদাসীন। যে প্রাণকে দেখতেই পাইনা, অথবা নাম জানি না, কিম্বা নাম জানি, কিন্তু আমার কাজে আসে না, তাঁর বেঁচে থাকা, না থাকা নিয়ে মাথা ঘামাবই বা কেন? ঘামাব, কারণ, পৃথিবীর জৈব বৈচিত্র নষ্ট হলে তাঁর আঁচ কিন্তু একটু একটু করে আমাদের ওপরেই এসে পড়বে, এই মানব সভ্যতার ওপর।
কেন জৈব বৈচিত্র নষ্ট হচ্ছে?
মূলত পরিবেশ দূষণের কারণেই বিশ্বের জৈব বৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। যে কোনও রকমের দূষণেই মানুষের ভূমিকা অনেকটা। এছাড়া অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণ যেমন বিশ্ব উষ্ণায়ন তো রয়েইছে, তবে সে সবের দায়ও আমরা পুরোটা এড়িয়ে যেতে পারি না।
প্লাস্টিক দূষণের খবর রোজ খবরে প্রকাশিত হচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশে তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের পাহাড়। জলের তলায় থাকা প্রাণীদের শরীরে মিলছে প্লাস্টিকের অংশ। বিশ্ব উষ্ণায়নের কথাও অজানা নয়। বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরু প্রদেশে বরফ গলতে শুরু করেছে। প্রতি বছরের তাপমাত্রা আগের বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, উত্তর গোলার্ধে ২০২৩ সালের গ্রীষ্মকাল ছিল উষ্ণতম। কত বছরের মধ্যে উষ্ণতম? ২০০০ বছরের মধ্যে!
বনাঞ্চল ন্যাড়া হচ্ছে ক্রমশ। আর এই সব কারণেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে কত শত প্রজাতির প্রাণ। ফলে ক্রমশ কমে যাচ্ছে জৈব বৈচিত্র। ভাল নেই পৃথিবী । শুধু নিজেদের জাগতিক চাওয়া পাওয়ার বাইরে একটু যদি পরিবেশকে নিয়ে ভাবি আমরা, পরিবেশও আমাদের ফিরিয়ে দেবে অনেকটা ভালবাসা।
তাই এই বিশেষ একটা দিন শুধু নয়, জৈব বৈচিত্র রক্ষার জন্য ও সচেতনতা ছড়ানোর জন্য প্রতিটা দিনই বেছে নিন। এই পৃথিবী যতোটা আমার-আপনার, ততোটাই অন্যদের।