বাঙালির নতুন বছর শুরু হয় বৈশাখ দিয়ে। আর বৈশাখের প্রথম দিন হয় নতুন বছরের উদযাপন। আর সারা বাংলাজুড়েই নববর্ষের আগে যে ঘটনা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, তা হল চৈত্র সেল। সারা বাংলায় চৈত্র মাস জুড়ে জামাকাপড়-সহ নানা রোজকারের দরকারের পণ্যে চলে আকর্ষণীয় ছাড়। চৈত্র সেল ছাড়া নতুন বছর ভাবাই যায় না। তবে কিনা, কালের নিয়মে উদযাপনের ধারা যেমন বদলেছে, উৎসবের ভাষা বদলেছে, তেমনি খোলনলচে বদলে গেছে চৈত্র সেলের ধরন।
কলকাতার কথা-ই ধরা যাক। দু'দশক আগে পর্যন্ত চৈত্র মাস জুড়ে ঠাসা ভিড় থাকত গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, এসপ্ল্যানেড চত্ত্বরে। রাস্তায় রাস্তায় ঢালাও বিক্রি হতো শাড়ি জামা শার্ট, জুতো, বেডকভার আরও কত কী! বছরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া যেত সেসব। আর মধ্যবিত্ত বাঙালি একবার, দুবার বারবার ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত। দোকানির ঘাম লেগে যেত খদ্দেরের গায়ে। বিকেলের দিকে সে কী গাদাগাদি ভিড়! ছাড়ের পরেও দরদাম চলত লম্বা।
দেখতে দেখতে সময় বদলাল। ভিড় পাতলা হতে থাকল গড়িয়াহাট-হাতিবাগানের রাস্তায়। একটু একটু করে শপিং মল গিলতে থাকল, প্রথমে শহরকে, তারপর মফঃস্বলকে। এখন সারা বছরেই নানা ডিস্কাউন্ট। চৈত্র সেল বদলে 'এন্ড অফ সিজন সেল'। সময়ে সময়ে ঠাসাঠাসি ভিড় হয় বটে, কিন্তু এর গায়ে ওর ঘাম লেগে যাওয়া নেই, এসি আছে যে! সেখানে বিকল্পও বেশি। জামা গায়ে আঁটছে কিনা, দেখার জন্য ট্রায়াল রুম, ঝকঝকে আয়না সব আছে। হাতে সময় কম থাকলে অনলাইন শপিং আছে। টাকা মেটানোর জন্য লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কিটুকু পর্যন্ত নেই।
কেউ কেউ বলবেন, জীবন সহজ হয়েছে, প্রযুক্তি এসে সময় বাঁচিয়েছে ঢের। কেউ আবার সামান্য অন্যমনস্ক হয়ে ফিরতি পথে সেই জৌলুস হারানো চৈত্র সেলেই যাবেন। এক সময়ের সাক্ষী থাকতে, কে জানে যদি পরেরবার এটুকুও না হয়!