অকাল বোধন! অসময়ে দেবী দুর্গার পুজো করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই থেকেই নাকি শরতে দুর্গা পুজোর প্রচলন। সেই চলই ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠল বাংলায়। দু' শতক আগে বাংলায় বারোয়ারি পুজোর চল তেমন ছিলই না। পুজো মানেই কলকাতার জমিদার বাড়ির পুজো, বনেদি বাড়ির পুজো। সে সবের মধ্যেও সবচেয়ে পুরনো শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো।
১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেব শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজোর আয়োজন করলেন। ১৭৫৭! বাংলার ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সাল। পলাশীর যুদ্ধের বছর। আর হ্যাঁ সে যুদ্ধের সঙ্গেই জুড়ে আছে শোভাবাজারের পুজো শুরুর গল্প।
পলাশির যুদ্ধে সিরাজদৌল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ে ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। যুদ্ধে রবার্ট ক্লাইভের জয় উদযাপন করতে নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে বসল দুর্গাপুজোর আসর। এ কী গর্বের ইতিহাস, নাকি লজ্জার? পরিবারের সদস্যরা কী ভাবছেন?
নবকৃষ্ণ দেবের সপ্তম প্রজন্ম প্রবাল নারায়ণ দেবের সঙ্গে কথা হল এডিটরজি বাংলার। প্রবাল বাবু জানালেন, পাঠ্য বইতে রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস পড়ে রাগ হত, ব্রিটিশদের খুশি করতেই পুজোর শুরু? তখন দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইত ইংরেজ বিরোধী রক্ত। পরিণত বয়সে অবশ্য প্রবাল বাবুর ভাবনা বেশ বদলেছে। এখন তিনি মনে করেন, ১৭৫৭ থেকে, ২০২২, ২৬৫ বছরের ইতিহাসে বিবর্তন এসেছে। কিন্তু রাজবাড়ির পুজোর পেছনে গর্ব-লজ্জা কিছুই নেই, আসলে যা আছে, তা শুধুই অর্থনীতি।
রাজবাড়ির পুজোর ধরণ, পুজোর প্রথা নিয়ে বহু চর্চা হয়ে এসেছে সেই কবে থেকেই। তবে পুজোর ইতিহাসের একেবারে গোড়ায় লেগে থাকা ঘটনা নিয়ে অস্বস্তি থেকে গেছে, তাই সেই প্রসঙ্গ কম চর্চিত, আর সেই নিয়ে মন খুলে কথা বললেন প্রবাল বাবু।
বললেন, রাজবাড়ির ট্রাস্টের পুজো থেকে আয় নেই, বরং দায় আছে পুজো চালিয়ে যাওয়ার! পুজো বন্ধ হলে লোকে কী বলবে! রাজত্ব ফুরিয়েছে, ক্ষমতা হাতছাড়া, অথচ জাঁকজমক জৌলুস বজায় করে মানুষকে মুগ্ধ করার দায় কেন নিতে হবে পরিবারকে, প্রশ্ন তুললেন রাজ পরিবারেরই সদস্য।
প্রবাল বাবুর সঙ্গে কথা চলতে চলতেই শোভাবাজার রাজবাড়িতে সন্ধে নামল, আলো ঝলমলিয়ে উঠল গোটা রাজবাড়িজুড়েই। পুজোর প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। ফিরতি পথে বারবার একটাই কথা মনে হল,, ইতিহাসের তো অনেক কোন, যখন যেখানে আলো পড়ে, একটু ভাল করে দেখে নিতে হয়।