অফিসে কাজ করতে করতেই চেয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু ব্যাঙ্ককর্মীর। পুনের ই অ্যান্ড ওয়াই-এর তরুণী কর্মীর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছিল গত সপ্তাহেই। দিন কয়েকের মধ্যে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লখনউ-এর এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে। অফিসে কাজ করতে করতে চেয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হল ৪৫ বছরের সদফ ফতিমার।
লখনউয়ের গোমতিনগরের বিভূতিখন্ড এইচডিএফসি শাখার অ্যাডিশনাল ডেপুটি ভিপি সদফ ফতিমার নাকি কাজের সাংঘাতিক চাপ ছিল, বলছেন ফতিমার সহকর্মীরাই। কাজের চাপেই মৃত্যু কিনা, সেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সদফ ফতিমার দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় নতুন করে ফের আন্না সেবাস্টিয়ানের মৃত্যু নিয়ে শোরগোল পড়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। দেশের কর্ম সংস্কৃতির নেতিবাচক দিক তুলে ধরে বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন অখিলেশ। টুইট করে এই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে অখিলেশ দাবি করেছেন, বিজেপি সরকারের আর্থিক নীতি এতই দুর্বল, যে বেসরকারি সংস্থাগুলো কর্মী সংখ্যা কমিয়ে কর্মীদের ওপর কাজের চাপ বাড়াচ্ছে ক্রমশ। সদফ ফতিমার মৃত্যুর জন্য সরাসরিই সরকারকে দায়ি করেছেন অখিলেশ। পাশাপাশি দায়ি করেছেন, বিজেপির কর্মী সমর্থকেদেরও, যারা বিজেপির আর্থিক নীতি নিয়ে 'ভুল' বুঝিয়ে যাচ্ছেন মানুষকে।
অফিসে কাজের অস্বাভাবিক চাপে ২৬ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। কর্ম সংস্কৃতি পাল্টান, এই মর্মে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছেন মৃতার মা। ২৬ বছরের আন্না সেবেস্টিয়ান পেরাইলের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে গত সপ্তাহেই। মা অনিতা অগাস্টিন EY India-এর চেয়ারম্যান রাজিব মেমানিকে চিঠি লেখার শুরুতেই জানিয়েছেন, তাঁর হ্রদয় ভেঙে গিয়েছে, তবু অন্য কোনও পরিবারকে যাতে এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়, তার জন্য এই চিঠি লেখা দরকার। চিঠিতে আন্নার মা লিখেছেন, মেয়ে লড়াকু ছিল, কিন্তু কাজের চাপ, কাজের পরিবেশ, কাজের দীর্ঘ সময় মেয়ের শরীর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। ক্রমশ ঘুমহীনতা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ মেয়েটাকে গ্রাস করতে থাকে। অনিতা জানিয়েছিলেন অফিসের কাজের বাইরেও কাজ দেওয়া হতো তাঁর মেয়েকে, ছুটির দিনে, অফিসের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রাতেও কাজ করতে হতো। রাতে কাজ দিয়ে পরের সকালের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলতেন ম্যানেজার।
আন্নার ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বক্তব্য রাখার সময় পুনের ঘটনার উল্লেখ করে সীতারামন বলেন, কাজের চাপ যেমনই হোক, কাজের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে নিজেকে ভেতর থেকে শক্ত হতে হবে কর্মীকে। এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হলে অর্থমন্ত্রী সাফাই দেন, তিনি মৃতার নাম উল্লেখ করেননি, তাই একে ভিক্টিম স্লেমিং বলা যাবে না কোনওভাবেই।
প্রথমে ২৬ বছরের আন্না, তারপর ৪৫ বছরের ফতিমা, পরপর দুই মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় তা নিয়ে এখন দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভারতের অফিসের নেতিবাচক কর্ম সংস্কৃতি নিয়ে আগেও বিস্তর খবর সামনে এসেছে। মাসেই বেঙ্গালুরুর এক ঘটনা সামনে এসেছিল। অভিমানে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন বেঙ্গালুরুর ৩৭ বছরের অধ্যাপক, কারণ, নিজেকে উজার করে দেওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর বেতন বাড়ছিল না ইঞ্জিনিয়রিং কলেজের সহকারী অধ্যাপকের। হালে আবার ইপিএফ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠান। নিজের ইস্তফাপত্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, কেন চাকরি ছাড়ছেন, সেই প্রশ্নটুকু পর্যন্ত কেউ করল না তাঁকে।
অধ্যাপক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, বিগত ১০ বছর ধরে পূর্ব বেঙ্গালুরুর একটি ইঞ্জিনিয়রিং কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। ২০১৯-এর পর থেকে ছবিটা অনেক পাল্টেছে। কলেজের অন্য তিনটি শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নতুন অধ্যক্ষ আসার পর। তারপর থেকে তাঁর বেতন বাড়েনি বলেও দাবি ওই অধ্যাপকের। পড়ুয়ারা তাঁর পড়ানোয় খুশি, নিজের টাকা খরচ করে কতবার NAAC-এর অ্যাক্রেডিশনের এন্ট্রি ফি, নানা প্রতিযোগিতার জন্য কলেজের তরফে এন্ট্রি ফি তিনি দিয়ছেন বলেও দাবি তাঁর।
ক্লাস শেষে রাত ৮/৯ টা পর্যন্ত কলেজে কাজ করেছেন, এমনকী রবিবারও কাজ করেছেন। অথচ মাইনে বাড়ার বেলায় জুনিয়রদের বেড়ছে, তাঁর ইপিএফ দেওয়া বন্ধ হয়েছে।