দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023 ) বাংলার সবথেকে বড় উৎসব । রাজ্যের প্রতিটি প্রান্ত মায়ের পুজোয় মেতে ওঠে । কিন্তু, এ বাংলাতে এমন কিছু জায়গা আছে এখনও, যেখানে বাঁশ পড়ে না, প্যান্ডেল বাঁধা হয় না, ঢাকের আওয়াজ শোনা যায় না । দুর্গাপুজোর সময় ঝাড়গ্রামের (Jhargram Ashakanthi Durga Puja) বেলপাহাড়ি ব্লকের এড়গোদার আশাকাঁথি গ্রামের ছবিটাও ঠিক সেরকমই । পুজো দেখতে গেলে সেখানকার বাসিন্দাদের যেতে হয় দুই-পাঁচ কিলোমিটার দূরে । তবে, এবছর সেই প্রত্যন্ত গ্রামে সাজো সাজো রব । মায়ের পুজো হবে যে । দশভূজার পুজোয় উদ্যোগ নিয়েছেন কিন্তু গ্রামের মেয়ে-বউরাই । ইতিমধ্যেই সেখান খুঁটিপুজোর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি ।
আশাকাঁথি গ্রামে কোনওদিনই দুর্গাপুজো হয়নি । দু'কিলোমিটার দূরে জয়পুর দুর্গাপুজো হয়। আর নয়তো পাঁচ কিলোমিটার দূরের শিলদায় জাঁকজমক করে দুর্গাপুজো হয় । কিন্তু, গ্রামের মহিলাদের পক্ষে দূরে গিয়ে পুজো দেওয়া ও দেবীদর্শনে সমস্যা হত । সম্প্রতি গ্রামের কয়েকজন মহিলা আলোচনায় বসে গ্রামে দুর্গাপুজো করার প্রস্তাব দেন । কিন্তু, পুজোর টাকা জোগাড় হবে কোথা থেকে ? গ্রামের প্রবীণরা আলোচনা করে ঠিক করেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে সবাই যে টাকা পান, তার কিছুটা অংশ দান করে তহবিল গড়ে তোলা হবে । সেই টাকা দিয়েই মায়ের পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে প্রতি মাসে সাধারণ মহিলারা পান ৫০০ টাকা । আর জনজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণির মহিলারা পান এক হাজার টাকা । গ্রামের ১৫০ জন মহিলার প্রত্যেকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়েছেন । ১৩ জনের পুজো কমিটিও গঠিত হয়েছে । এখনও পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকার সংস্থান হয়েছে । আশাকাথি সর্বজনীন দুর্গোৎসব মহিলা কমিটির সভানেত্রী শোভারানি চন্দ্ৰ বলছেন, "অনেকদিন ধরেই গ্রামে দুর্গাপুজো করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেননি। অবশেষে আমরাই পুজোর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ১৫০ জন উপভোক্তা মহিলা গ্রামে রয়েছেন । সকলে অর্থ সাহায্য করেছেন।"
গ্রামের প্রবীণা আশালতা কুণ্ডু, মেঘরি শবরের কথায়, "সংসার সামলে দূরে গিয়ে পুজো দেখাটা খুবই সমস্যার ছিল। এ বার গ্রামে পুজো হবে। এটাই বড় প্রাপ্তি।” কলেজ পড়ুয়া মানসী চন্দ্র, স্কুল পড়ুয়া প্রীতি নন্দীরাও টিফিনের জমানো টাকা পুজোর তহবিলে দান করেছেন । তাঁদের কথায়, "মায়েরাই মাতৃপূজার আয়োজন করছেন। আমরাও সহযোগিতায় থাকছি।"