দুর্গাপুজো মানেই এখন নানারকম থিমের বাহার । শুধু মণ্ডপ নয়, দুর্গাপ্রতিমাও হয় থিম সর্বস্ব । সাবেকি পুজো হাতে গোনা । পুজোর চার-পাঁচটা দিন ঘুমায় না এ শহর । রাত জেগে ঠাকুর দেখা, হই-হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়ায় মজে বাঙালি । তবে, রাজবাড়ি, বনেদি বাড়ির পুজোগুলো কেমন হয়, কী তার নিয়ম, কখনও চোখের সামনে দেখেছেন ? উপভোগ করেছেন কোনও রাজবাড়ির পুজো ? এবার পুজোর ছুটিতে এমন কিছু জায়গায় ঘুরে আসতে পারেন, যেখানে রাজবাড়িতে থেকে রাজকীয় দুর্গাপুজোর স্বাদ নিতে পারবেন । রইল এমনই চার ঠিকানার খোঁজ ।
মহিষাদল রাজবাড়ি
কলকাতা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে সবুজের মাঝে দাঁড়িয়ে শ্বেতশুভ্র মহিষাদল রাজবাড়ি । কতশত বছরের ইতিহাস এই রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে । ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আভিজাত্য । তিনটি প্রাসাদ নিয়ে তৈরি এই রাজবাড়ি। প্রথম প্রাসাদের নাম রঙ্গিবসনা। দ্বিতীয়টির নাম লালকুঠি এবং তৃতীয়টির নাম ফুলবাগ । ফুলবাগেই অতিথিদে প্রবেশ, থাকার ব্যবস্থা রয়েছে । আনুমানিক ১৭৭৮ সালে রানি জানকী দেবী রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন । প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন এখানকার পুজো । রঙ্গিবসনার দুর্গামন্দিরে পুজো হয় । ডাকের সাবেকি সাজে দেখা যায় দেবীকে । তবে,পুজোর সেরকম জাঁকজমক নেই এখন । তবে, রাজকীয়ভাবেই দুর্গাপুজো হয় এখানে ।
ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে সাউথইস্টার্ন লাইনের ট্রেন ধরতে হবে । নামতে হবে মহিষাদল । সেখান থেকে মাত্র ২ কিমি গেলেই রাজবাড়ি । আর সড়কপথে গেলে বম্বে রোড ধরে নন্দকুমার মোড় পার করে কাপাসিরিয়া মোড়। সেখান থেকে ৫ কিলোমিটার গেলেই রাজবাড়ি । সেখানেই রাতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে । ভাড়া মোটামুটি ৫-৮ হাজার থাকা । বিস্তারিত জানতে রাজবাড়ি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ।
ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি
ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের দুর্গাপুজো প্রায় ৪০০ বছর পুরনো। এখানে দেবী পটেশ্বরী রূপেই পূজিতা হন । পুজো শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর ১৫ দিন আগে জিতাষ্টমী থেকে । প্রাচীন সব ঐতিহ্য মেনেই এখানে পুজো হয় । ঝাড়গ্রামে ঐতিহ্যবাহী দুর্গোপুজোয় সাক্ষ্মী থাকতে আপনিও পৌঁছে যেতে পারেন রাজবাড়ি । পুজো দেখার সঙ্গে ঝাড়গ্রামের বাকি জায়গাগুলোও দেখে আসতে পারেন ।
রাজবাড়ির ভিতরেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে । ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের উদ্যোগে রাজবাড়ির মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে 'দ্য প্যালেস ঝাড়গ্রাম' রিসর্ট । ১৪টি ঘর রয়েছে । অনলাইন বা ফোনের মাধ্যমে বুকিং করা যায় । রাজবাড়িতে থেকে পুজো দেখার পাশাপাশি রাজকীয় খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা থাকছে ।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো । রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই এখানে শুরু হয় দুর্গাপুজো । কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোর একটা বিশেষত্ব রয়েছে প্রতিমায় । অন্যান্য প্রতিমার মতোই দেবী দশভূজা । একচালা প্রতিমার পিছনে আঁকা থাকে দশমহাবিদ্যা । আর এখানকার দুর্গা রাজরাজেশ্বরী হিসাবে পরিচিত । তবে মা দুর্গার বাহন সিংহ নয় । এখানে ঘোটকের উপর আসীন দেবী । দূর দূরান্ত থেকে এখানে ভিড় করেন পর্যটকরা । আপনিও একটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন কৃষ্ণনগরে ।
কৃষ্ণনগরে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল, হলিডে হোম রয়েছে । সেখানে এক রাত থেকে রাজবাড়ির পুজো উপভোগ করতে পারেন ।
সুরুল রাজবাড়ি
শান্তিনিকেতন গিয়েছেন, অথচ সুরুল রাজবাড়িতে যাননি, এমন অনেকেই রয়েছেন । তাহলে দুর্গাপুজোয় দুইদিনের জন্য কাটিয়ে আসুন শান্তিনিকেতনে । একইসঙ্গে উপভোগ করুন বোলপুরের সুরুল জমিদার বাড়ির পুজো । প্রায় ২৯০ বছরের প্রাচীন এই পুজো । প্রতিমাকে সাজানো হয় ডাকের সাজে। সঙ্গে থাকে সোনা এবং রুপোর গয়না। রাজবাড়িতে নজর কাড়ে নানান রঙের কাচের ফানুস এবং বেলজিয়াম কাচের ঝাড়বাতি। দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই সুরুল জমিদার বাড়িতে পুজো দেখতে আসেন ।
শান্তিনিকেতন স্টেশনে নেমে যে কোনও টোটো বা অটো ধরে পৌঁছে যান সুরুল জমিদারবাড়ি । শান্তিনিকেতনে রাত কাটানো জন্য প্রচুর হোটেল, বাংলো, রিসর্ট আছে ।