'বিশেষভাবে সক্ষম'...এই শব্দবন্ধে লুকিয়ে রয়েছে অনেক না পওয়ার যন্ত্রণা, হাজারও প্রতিবন্ধকতা ও পরনির্ভরশীলতা । কিন্তু, কেউ কেউ আবার এই প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে নিজের পরিচয় তৈরি করছেন সমাজে । ঠিক যেমন ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের ধরমপুর গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ বিশাল । বয়স আন্দাজ ওই ৪৭ বা ৪৮ হবে । কথা বলতে পারেন না, কানে শুনতে পান না । কিন্তু, পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে নেই তিনি । ঝাড়গ্রামের বিখ্যাত শিল্পী তিনি । এক ডাকেই সকলে চেনে তাঁকে । এখন তো আবার তাঁর নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত নেই । মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত তিনি । কাঠামোয় মাটির প্রলেপ লাগিয়ে তাঁর শৈল্পিক ছোঁয়ায় মা-কে সাজিয়ে তুলছেন ।
জানা গিয়েছে,বিকাশ বাবু জন্ম থেকেই বিশেষভাবে সক্ষম । বন্ধুদের সঙ্গে খেলার ছলেই মূর্তি বানাতে গিয়ে আজ তিনি বড় মৃৎশিল্পী । জানা গিয়েছে, একবার মামার বাড়ি গিয়ে মামাতো ভাইদের সঙ্গে মিলে বড় কালী মূর্তি তৈরি করেছিলেন বিকাশবাবু । পরে তাঁর তৈরি কালী প্রতিমা দিয়েই কালী পুজো শুরু করেন তাঁর মামারা । তারপর থেকেই বাবা ও পরিবারের উৎসাহে কাঁচা হাতে ঠাকুরের মূর্তি বানাতে শুরু করেন তিনি । আর আজ সেই বিকাশবাবু একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ।
বিকাশবাবুকে সঙ্গ দেন তাঁর বাবা ও ছেলে । পুজো কমিটির সদস্যদের সব কথা, অর্থাৎ প্রতিমা কেমন হবে, কতটা বড় এবং কত উচ্চতার হবে, তা বিকাশবাবুকে বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করেন তাঁর বাবা ও ছেলে । পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা । এবছর দুর্গাপুজোতে মোট ৪ টি মণ্ডপের প্রতিমা তৈরি বরাত পেয়েছেন বিকাশ মাল । এছাড়া, দুর্গা মূর্তির সঙ্গে প্রতি বছর প্রায় ৪০ টি সরস্বতী,২০ টি কালী এবং সদ্য শেষ হওয়া গণেশ পুজোতে মোট ৮ টি প্রতিমা বা তার কম বেশি মূর্তি তৈরির বরাত থাকে । শুধু ঝাড়গ্রাম নয়, জেলার বাইরে দূর-দূরান্ত থেকেও প্রতিমা তৈরির বরাত পান বিকাশ বিশাল । তিনি সকলের অনুপ্রেরণা বলা যেতে পারে ।