যুগ বদলেছে । বদলেছে অভ্যাস, বদলেছে সমাজের চালচিত্র । টাইম মেশিনে করে যদি ৪০-৪৫ বছর আগে চলে যাওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, ছেলেরা কাজে বেরোচ্ছেন । আর বাড়িতে মা-মাসি, দিদা-ঠাকুমারা উদরস্থ খেটে চলেছেন দিন-রাত । ঘর সামলাচ্ছেন, বাচ্চা সামলাচ্ছেন । তখনকার দিনে মেয়েদের বাইরে বেরিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা সেভাবে ছিল না । তবে, দিন যত এগিয়েছে আধুনিক হয়েছে এই সমাজ । পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন মেয়েরা । তবে, কর্মরত মহিলাদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত হয়ে ওঠে চ্যালেঞ্জের । বিশেষ করে যাঁরা 'ওয়ার্কিং মাদার', বাড়িতে সন্তান রেখে কাজে বেরচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু মনে সবসময় ভয়, আশঙ্কা থেকেই যায় । সন্তানকে কীভাবে বড় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ এডিটরজি বাংলায় রইল 'কর্মরত মা'-দের জন্য বিশেষ টিপস...
সন্তানের সুরক্ষা
অফিসের কাজে স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই বেরিয়ে যাচ্ছেন । সন্তানকে রেখে যেতে হচ্ছে ন্যানি বা পরিচারিকার কাছে । কিন্তু, তাঁদের কাছে আপনাদের সন্তান আদৌ সুরক্ষিত তো ? এখন প্রায়ই খবর শোনা যায়, বাড়ির পরিচারিকার বিরুদ্ধে শিশু পাচারের অভিযোগ । কিংবা একরত্তিকে দিনের পর দিন মারধর, শারীরিক অত্যাচার করছে । ভাবলেই একটা অজানা আতঙ্কে বুকটা কেঁপে ওঠে । সেক্ষেত্রে, কীভাবে নিজের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখবেন ?
সন্তানকে যাঁর দায়িত্বে রেখে যাবেন, প্রথমে ভাল করে তাঁর খোঁজখবর নিতে হবে । সতর্ক হতে হবে । নজর রাখতে হবে । কিন্তু, আপনি তো বাড়িতেই থাকেন না কীভাবে নজর রাখবেন ? সাহায্য নিন প্রযুক্তির । বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান । যাতে অফিসে কাজ করতে করতেই নজর রাখতে পারেন ।
ক্রেশ
নতুন মায়েদের জন্য ক্রেশ একটা দারুণ বিকল্প । আজকাল অফিস চত্বরের কাছে, এমনকী অফিস বিল্ডিংয়ে ক্রেশ থাকে । যেখানে আপনি আপনার সন্তানকে রেখে নিশ্চিন্তে অফিসে কাজ করতে পারেন । বাচ্চাদের খাওয়া, ঘুম থেকে খেলা...সব দায়িত্ব ক্রেশের । অফিসের মাঝে বাচ্চাকে দেখেও আসতে পারবেন । শিশু বিকাশেও সাহায্য করে ক্রেশ ।
চলতি বছর বাজেট পেশের সময় কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে শিল্পক্ষেত্র এবং আইটি হাবগুলিতে ক্রেশ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । সরকারি ও বেসরকারি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্রেশ পরিষেবা বাড়ছে ।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্তানের কথা চিন্তা করে মায়েরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন । তবে, অনেকের কাছে চাকরিটাও তো প্রয়োজন । সেক্ষেত্রে এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমেরও সুবিধা দেয় বিভিন্ন কোম্পানি ।
মূল্যবোধ
শিশুদের সুরক্ষা যেমন মায়েদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই সন্তানের মধ্যে মূল্যবোধ গড়ে তোলাও প্রথম প্রায়োরিটি । চাকুরিজীবী মহিলারা সন্তানের সঙ্গে সেভাবে সময় কাটাতে পারেন না ঠিকই । কিন্তু, তার মধ্যে থেকেও সময় খুঁজে নিতে হবে । অফিস থেকে ফিরে বেশিরভাগ সময়টা সন্তানের সঙ্গেই কাটানোর চেষ্টা করুন ।
ছোট থেকেই সন্তানকে সবক্ষেত্রে ইন্ডিপেনডেন্ট করে তোলার চেষ্টা করুন । কিছুই না, ঘরের টুকটাক কাজে হাতে হাতে একটু সাহায্য করা । নিজের কাজ নিজেকেই করতে শেখানো ।
ছেলে-মেয়ের বন্ধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন । তবেই তাদের মনের কথা জানতে পারবেন । কোনও বিপদ আঁচ করলে সাবধান করতে পারবেন ।
ছোট থেকেই সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে শিশুদের মধ্যে । কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল শেখাতে হবে । মেয়ে সন্তান হলে প্রথমেই শেখাতে হবে, গুড টাচ ও ব্যাড টাচ সম্পর্কে । আর ছোট থেকেই সন্তানকে 'সম্মান'-এর পাঠ পড়ান । বিশেষ করে আপনার পুত্র সন্তানকে নারীদের সম্মান করা শেখাতে হবে । তাহলে 'শ্লীলতাহানি', 'ধর্ষণ'-এর মতো বিষয়গুলি রোখা যাবে ।
ছোট থেকেই এই ধরনের মূল্যবোধগুলি ধীরে ধীরে শিশুদের যদি রোপণ করা যায়, তাহলে হয়তো সমাজে এত ক্রাইম হবে না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটা সুস্থ পরিবেশ পাবে, আর এই পৃথিবী আরও সুন্দর হয়ে উঠবে । কারণ, শিশুরাই তো জাতির ভবিষ্যৎ ।
বর্তমানে পড়াশোনার চাপ একটু বেশিই । আসলে প্রতিযোগিতার বাজার । তবে, পড়াশোনার পাশাপাশি মানসিক বিকাশে, শারীরিক বিকাশে খেলাধূলাও প্রয়োজন । স্বামী বিবেকানন্দ বলে গিয়েছিলেন, 'গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে' ।
মোবাইল থেকে দূরে রাখুন সন্তানদের । মোবাইল শারীরিক, মানসিক ক্ষতি করে দেয় । বরং, গল্পের বই পড়ানোর অভ্যাস করতে পারেন । জ্ঞান বাড়বে । ভাল অভ্যাস তৈরি হবে ।
প্রত্যেক শিশু থাকুক সুস্থ ও সুন্দর, এডিটরজি বাংলার তরফে সকলকে শিশু দিবসের শুভেচ্ছা ।