ভুবনমোহিনী রূপ তাঁর । অপূর্ব তাঁর মহিমা । তাঁর ওই রূপের টানেই তো মোহিত জগৎ । তাই, নবমীর সকাল থেকেই কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়ায় দর্শনার্থীর ভিড় । হাত জোর করে দেবীর কাছে চেয়ে নিচ্ছেন আশীর্বাদ । কথিত আছে, খালিহাতে ফেরান না চাষাপাড়া-র বুড়িমা । প্রতলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, বুড়িমার প্রসাদ মুখে দিলে মনস্কামনা পূরণ হয় । রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় থেকে এই পুজোর সূচনা হয় । এবার ২৫১ বছরে পড়ল 'বুড়িমা'-র পুজো ।
কৃষ্ণনগরের চাষাপাড়া মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে এই পুজোর সঙ্গে । আর ভক্তদের বিশ্বাস । দূরদূরান্ত থেকে মায়ের রূপ দর্শনে আসেন বহু মানুষ । নবমীর সকাল থেকেই সেই ছবি দেখা গেল । মন্ডপে থিকথিকে ভিড় । শুধু কালো মাথার সারি । সোনার অলংকারে সেজে উঠেছেন দেবী । মাথা থেকে পা পর্যন্ত সোনার অলংকারে মুড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে । জানা গিয়েছে, তাঁর মাথায় প্রায় ৩০ ভরি ওজনের সোনার মুকুট, প্রায় ৫০ ভরি ওজনের টায়রা ও টিকলি । হাতে থাকে প্রায় ২০টির মতো বালা । যার ওজন প্রায় দু’কেজি । এ ছাড়াও গলায় থাকে ১২টি সোনার সীতাহার । যার ওজন প্রায় দু’কেজি । প্রায় ২০ ভরি ওজনের সোনার চিক থাকে প্রতিমার অঙ্গে । বুড়িমা-র পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছরই ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে ।
বুড়িমা-র ইতিহাস
কৃষ্ণ নগরের রাজ বাড়ির জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রায় সমসাময়িক কাল থেকেই বুড়িমা-র পুজোর সূচনা বলে মনে করা হয় । কথিত আছে একসময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ভেবেছিলেন কীভাবে তার এই প্রতিমার খরচ ও আনুষঙ্গিক দায় দায়িত্ব বহন করবেন । এরপরই দেবী তাঁকে পুনরায় স্বপ্নাদেশ দেন, চাষা পাড়ায় যারা লাঠিয়াল আছেন তাঁরাই এই প্রতিমার দায় দায়িত্ব সামলাবেন ।
অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে, চাষা পাড়া অঞ্চলে বুড়িমা বলে কেউ বাস করতেন তার নামেই এই পুজোর নামকরণ । কিন্তু তা সত্য নয় বলেই মত এলাকাবাসীর। পুজোর প্রাচীনতার ওপর ভিত্তি করেই এই পুজো বুড়িমা নামে প্রসিদ্ধ । আগে বলা হতো চাষা না, পরে নাম হয় বুড়ি মা ।