কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাড়ম্বরে পালিত হয় কালীপুজো ও দীপাবলি। গোটা শহর সেজে ওঠে আলোকমালায়। ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে প্রদীপ, মোমবাতি। জ্বালানো হয় রকমারি আলো। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জ্বলে ওঠে আতসবাজির রোশনাই। কিন্তু এই রোশনাই শুধুমাত্র কালীপুজোর দিনই না, কালীপুজোর আগে ১৪ শাক খেয়ে সন্ধ্যায় ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে।
এই বছর ৩১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার কালীপুজো। অমাবস্যার আগের তিথি হল চতুর্দশী। যা, এবছর বুধবার পড়েছে, এই চতুর্দশী ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত। ভূত চতুর্দশীর পাশাপাশি, শাস্ত্রমতে এই তিথিকে নরক চতুর্দশীও বলে। কারণ, এই তিথিতে নাকি নরকের দ্বার খুলে যায়। যার ফলে ভূত-প্রেত নরক থেকে বেরিয়ে আসে। আর এই বিশ্বাস থেকেই নাকি আগেকার দিনে সন্ধ্যার পর এই তিথিতে বাড়ির বাইরে যেতে মানা করা হত।
কেন জ্বালানো হয় ১৪ প্রদীপ?
আর এই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয় ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি। কারণ কথিত আছে অশুভ শক্তি বা ভূত-প্রেত আলো দেখলে ভয় পায়। তাই এই দিনে ভূত-প্রেতদের নিজেদের বাড়ি থেকে দূরে রাখার জন্য বাড়িতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি প্রচলিত আছে। আবার অনেকেই মতে, ১৪ যমকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই চতুর্দশীতে বাড়িতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়।
এছাড়াও আরও কিছু মতবাদ আছে। অনেকেই মনে করেন, এই ভূত চতুর্দশী আসলে বিশেষ এক পার্বণ। ঠিক মহালয়ার মতো। মহালয়ার ভোরে যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়, এই তিথিতেও পরলোকগত চৌদ্দপুরুষ এর উদ্দেশ্যেই ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয় বাড়িতে বাড়িতে।
কেন খাওয়া হয় ১৪ শাক ?
আসলে মৃত্যুর পর আত্মারা নাকি প্রকৃতির মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। একে বলা পঞ্চভূত। এদিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর আগে ১৪ শাক খেয়ে ১৪ পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। মূলত ১৪ ধরণের শাক একসঙ্গে রান্না করে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
তবে, এই এই শাক খাওয়ার পিছনে কিন্তু একটি বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। আসলে আশ্বিন ও কার্তিক মাসকে যমদষ্টা কাল বলা হয়। এই সময় শীতের মরসুম শুরু হয়। আর মরশুম বদল মানেই নানা রকম রোগে ভোগার আশঙ্কা থাকে। তাই রোগভোগ থেকে রক্ষা পেতে এই ১৪ শাক খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।