‘ভাইয়ের কপালে ফোঁটা’ দিয়ে যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়ার জন্য একটা দিন তুলে রাখা রয়েছে ক্যালেন্ডারে। ভাইফোঁটা। এই দিনটা মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি শিকেয় ওঠে। দূরদূরান্ত থেকে ভাইবোনেরা ছুটে যায়, ফোঁটার জন্যই। ভাই-দাদাদের মঙ্গল কামনায় ভাইফোঁটা পালন করেন বোন-দিদিরা। গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পালিত হয় এই উৎসব। কোথাও ভাইফোঁটা, কোথাও ভাইদুজ, কোথাও ভাইবিজ আবার কোথাও বা ভাইটিকা।
কবে ভাইফোঁটা ?
মূলত কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা। এবছর ৩ নভেম্বর (১৭ কার্তিক), রবিবার পড়েছে ভাইফোঁটা। তবে দ্বিতীয়া তিথি শুরু হচ্ছে ২ তারিখ সন্ধ্যা আটটা কুড়ি থেকে কার্তিক মাসের শুক্লাপক্ষ থাকবে নভেম্বর মাসের ৩ তারিখ রাত দশটা পঞ্চাশ মিনিট পর্যন্ত। শুভ সময় দুপুর ১ টা ১০ মিনিট থেকে ৩ টে ২২ মিনিট পর্যন্ত।
ভাইফোঁটার ইতিহাস
কথিত আছে, এই ভাইফোঁটার উৎপত্তি হয়েছে মৃত্যুর দেবতা যমের থেকে। এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসবকে তাই 'যমদ্বিতীয়া'ও বলা হয়। অন্য একটি মত বলছে, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করার পর বোন সুভদ্রার কাছে গিয়েছিলেন। সেই সময় সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের উৎপত্তি।
দ্বিতীয়া না প্রতিপদ ফোঁটা কবে?
কোথাও প্রতিপদ কোথাও দ্বিতীয়ায় ভাইফোঁটা হয়। অবশ্য বেশিরভাগ জায়গাতেই দ্বিতীয়াতে ফোঁটা দেওয়ার চল। পূর্ববঙ্গের অনেক জায়গায প্রতিপদ এবং দ্বিতীয়া মিলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ভাইফোঁটা । তবে সেক্ষেত্রে মন্ত্রেরও ফারাক রয়েছে। চলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিপদের ফোঁটার মন্ত্র ‘প্রতিপদে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে ভাই আমার যম দুয়ারে তিতা।’
এখন ট্রেন্ডে বোনফোঁটাও :
যাঁদের দাদা বা ভাই নেই, তারাই বা কেন বাদ যান এই আনন্দ থেকে। অথবা বোন থাকলেও তাঁর মঙ্গল কামনায় টিকা লাগালে ক্ষতি কোথায়? সেক্ষেত্রে ভাইফোঁটার অর্থ আরও বৃহত্তর, নির্দিষ্ট কোনও ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয় বলা যেতে পারে । যাঁদের ভাই বা দাদা নেই, বোন বা দিদি আছে, তাঁরাও কিন্তু পালন করে 'ভাইফোঁটা', অনেকে আবার বলে বোনফোঁটা । দিদি বা বোন একে অপরের কপালে চন্দন বা ঘিয়ের ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ু, সুস্থতা কামনা করেন ।
বছরের পর বছর ধরে এভাবেই আনন্দে বাঁচুক বাঙালি, শুভ হয়ে উঠুক প্রতিটা উৎসব । প্রত্যেক ‘পার্টনার ইন ক্রাইম’দের এডিটরজি বাংলার পক্ষ থেকে ভাইফোঁটার শুভেচ্ছা ।