ঝাড়গ্রামের (Jhargram News) সাবিত্রী দুর্গা মন্দির । মন্দিরের লাল মেঝে, দেওয়ালের শিল্পকলা, পুরনো দিনের ঝাড়বাতি, পটচিত্র, এখনও সেই ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে (Durga Puja 2023 ) । তখন ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দ । এই মন্দিরের জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল । সর্বেশ্বর সিং চৌহান নামে এক রাজা এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন । লোকমতে, যুদ্ধ জয় করে ফেরার পথে এই জঙ্গলেই রাজার সুন্দরী রমণীর দেখা পাওয়া, রমণীর পাতাল প্রবেশ, রাজার হাতে তাঁর কেশরাশি...তারপর স্বপ্নাদেশ....এভাবেই শুরু হয় ঝাড়গ্রামে সাবিত্রী মায়ের পুজো, তারপর প্রতিষ্ঠা হয় মায়ের মন্দির ।
ঝাড়গ্রামের সাবিত্রী মন্দিরের পুজোয় মাতৃমূর্তি নয়, পটের পুজো হয়ে আসছে । ঝাড়গ্রামে পটের পুজো এই একটিই । এখানে ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হয় না । পুজো শুরু হয় ছিতা অষ্টমী থেকে যা দুর্গাপুজোর ১৫ দিন আগে থেকে শুরু হয় । মহালয়ায় চণ্ডীপাঠ, পুজোর বাকি দিনগুলিতে অন্ন ভোগ, দশমীতে পাঁঠা বলি দেওয়া হয় । রাজ পরিবারের পুজো, তাই পুজো শেষ হয় পাটাবিদা অর্থাৎ প্রতীকী শত্রু নিধনের মাধ্যমে। অস্ত্রপুজোর মধ্য দিয়ে পুজোর সমাপ্তি ঘটে। প্রতিবছর এই পুজোয় দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তদের সমাগম হয় । দর্শনার্থীরা মায়ের আশীর্বাদ নিতে ভিড় করেন ।
আরও পড়ুন, Durga Puja-Skin Care Tips: পুজোর আগে 'ত্বকের যত্ন নিন', রইল দারুণ সব ঘরোয়া টোটকা
১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর আম্রের রাজা মানসিংকে দায়িত্ব দেন বাংলায় মুঘল সম্রাজ্য বিস্তার করার । সেইসময় ঝাড়গ্রামের নাম ছিল জঙ্গলখণ্ড । রাজা মানসিং ঝাড়গ্রামের শাসককে পরাস্ত করতে পাঠান সেনাবাহিনীর এক যোদ্ধাকে । যার নাম ছিল সর্বেশ্বর সিং চৌহান। তৎকালীন সর্বেশ্বর সিং তৎকালীন জঙ্গল খন্ডের রাজা, মাল-কে পরাজিত করেন । তারপরের থেকেই সর্বেশ্বর সিং চৌহান মল্ল দেব হয়ে ওঠেন । রাজ্য জয় করার পর সর্বেশ্বর সিং চৌহান জঙ্গলখণ্ড তথা ঝাড়গ্রাম থেকে পুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন । সেই সময় জঙ্গল দিয়ে ফেরার সময় এক রূপসীকে দেখতে পান তিনি । এরপরই তাঁর পিছু নিতে শুরু করেন সর্বেশ্বর । ওই সুন্দরী রমণী জানান, তাঁকে ধরা সহজ নয় ।
সর্বেশ্বর দেখতে পান, ধীরে ধীরে পাতালে প্রবেশ করছেন সেই রমণী । তাঁকে বাঁচাতে ছুটে গিয়ে চুলের মুঠি ধরেছিলেন সর্বেশ্বর । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । একগোছা চুল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি । এরপর ওই রাতেই রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেন মা । বলেন, তিনি তাঁদের কুলদেবী, তাই এখানে মন্দির করে স্থাপনা করতে হবে । সেই কথা মত রাজা সর্বেশ্বর সিং চৌহান এখানে মা সাবিত্রী দেবীর মন্দির গড়ে তুলেন। এরপর থেকেই শুরু হয় মায়ের পুজো ।