Rath Yatra 2024: পুরী থেকে মায়াপুর, রথের রশির মাহাত্ম্য কোথায় জানেন, রইল ইতিহাস থেকে বৃত্তান্ত

Updated : Jul 04, 2024 06:22
|
Editorji News Desk

জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মাসির বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার উৎসবই রথ। আর রথ এগিয়ে আসা মানেই আকাশে বাতাসে পুজোর গন্ধ। দেশজুড়ে একাধিক জায়গায় মহাসমারোহে পালিত হয় রথ যাত্রা। রথের রশিতে টান দেওয়া জন্য লাখো লাখো ভক্ত সমাগম হয় পুরীর মন্দির, মায়াপুরের ইসকন, শ্রীরামপুরের মাহেশ সহ মল্লভূমে। 


আজ এডিটরজি বাংলার পর্দায় বেশ কিছু রথযাত্রার ইতিহাস থেকে বৈশিষ্ট্য রইল এক নজরে। 


পুরীর রথ: 


ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ অনুযায়ী, সত্যযুগ থেকে চালু হয়েছে রথযাত্রা। কথিত আছে, সেই সময় রাজা ইন্দ্রদ্যুন্ম বিষ্ণু মন্দির তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। মন্দিরে জগন্নাথ , বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি অধিষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজা। কিন্তু বিগ্রহ গড়ার সময় বিশ্বকর্মাকে অসন্তুষ্ট করেন ইন্দ্রদ্যুন্ম। সেই কারণেই দেবদেবীদের সম্পূর্ণ মূর্তি নির্মাণ না করেই চলে যেতে হয় বিশ্বকর্মাকে। মনে করা হয়, তাইই জগন্নাথ দেবের হাতের গঠন সম্পূর্ণ নয়। 


 দুই মাস ধরে এই রথ তৈরী করা হয়। রথ তৈরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল কাঠ নির্বাচন। সোনার কুড়ুলে সেই কাঠ কেটে শুরু হয় কাজ।  এই সময় কারিগররা নিরামিষ খান, পালন করেন ব্রহ্মচর্য। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকেই জগন্নাথের রথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যায়। গাছ পুজো করার পর সেই গাছ সোনার কুড়ুলে কাটা হয়। রথ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় নিম ও হাঁসি গাছের কাঠ।  জগন্নাথের রথের নাম ‘নন্দীঘোষ’, ভগবান বলরামের রথের নাম 'তালধ্বজ' এবং দেবী সুভদ্রার রথের নাম হল 'দর্পদলন'।এই রথে চড়েই মন্দির ভ্রমণ করেন তিন দেবতা। রথের চাকা তৈরিতেও রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য। দেশের মধ্যে এই রথযাত্রাই সর্ববৃহৎ। 


মাহেশের রথ: 

ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় হুগলির মাহেশে। শ্রীরামপুরে এই রথ দেখতে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্তদের ঢল নামে। জগন্নাথ দেবের মন্দির সংলগ্ন স্নান পীড়ি ময়দানে রথ উপলক্ষে প্রতিবছর ১ মাস ধরে চলে মেলা। প্রতিবছর নতুন সাজে সাজানো হয় রথ। 

কথিত আছে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে জগন্নাথের এক ভক্ত পুরী গিয়েছিলেন জগন্নাথদেবকে দর্শন করতে। দর্শন করার পর তার বাসনা হয় তিনি জগন্নাথদেবকে নিজের হাতে ভোগ রেঁধে খাওয়াবেন। কিন্তু সেদিন পুরীর জগন্নাথদেব মন্দিরের পাণ্ডারা তাকে বাধা দেন। এতে ধ্রুবানন্দ মনে খুব দুঃখ পান। ধ্রুবানন্দ মাহেশে এসে গঙ্গার ধারে সাধনা করতে থাকেন। একদিন ঝড়বৃষ্টির রাতে হঠাৎই ধ্রুবানন্দ দেখেন গঙ্গার তীরে একটা কাঠের বড়ো খন্ড ভেসে এসেছে। তা থেকেই তিন মূর্তি তৈরি করেন তিনি। অস্থায়ী ভাবে শুরু হয় পুজো। সেই থেকে আরও রাজারা এই মন্দির সংস্কারের কাজ করে এসেছেন। শ্রীচৈতন্য দেব ছাড়াও মাহেশের মন্দিরে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব, শ্রী মা সারদাদেবী, প্রখ্যাত নট ও নাট্যকার গিরীশ চন্দ্র ঘোষ, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এবং আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ। 


ইসকন রথ: 


মায়াপুরের রাজাপুরে রয়েছে জগন্নাথ দেবের মন্দির। সেখান থেকে ৭ জুলাই বের হবে রথ। সেখান থেকে সুসজ্জিত রথ আসবে মায়াপুরের মন্দিরে। ৭দিন রথ দর্শনের সুযোগ থাকবে মায়াপুরে। ৫৬ রকমের ভোগ দেওয়া হয় তিন বিগ্রহকে। ১৫ তারিখে আবার রথ ফিরে যাবে মায়াপুর থেকে রাজাপুরে। 

 


মল্লভূমে রথ : 


১৬৬৫ খ্রি বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজা বীর মল্ল বিষ্ণুপুর শহরের মাধবগঞ্জে রানি শিরোমণি দেবীর ইচ্ছা অনুযায়ী টেরাকোটার পাঁচ চুড়া মন্দির নির্মাণ করেন । রথের রশিতে টান দেওয়ার জন্য রাস্তায় উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড় । মন্দিরের বিগ্রহ রাধা মদন গোপাল জিউ । এই মন্দিরের অনুকরণেই তৈরি করা হয় পিতলের রথ । তবে,এখানের রথে,জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকেন না । প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, রাধা মদন মোহন জিউ রথে সওয়ার হন । এদিন, সকালে রাধা মদনের বিগ্রহকে বাদ্য যন্ত্র ও কীর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয় রথে । রথের মধ্যে চলে পুজো অর্চনা ও আরতি । এরপর শুরু হয় রথের রশিতে টান দেওয়ার পর্ব । দূর-দুরান্ত থেকে বহু মানুষ এসে উপস্থিত হয় ।


আর রথের রশিতে টান পড়া মানেই দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু। অনেক জায়গাতেই হয়ে যায় খুঁটি পুজোও। সোজা রথের দিন সাতেক পর উল্টোরথ, মাসি বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরেন জগন্নাথ ,বলদেব এবং সুভদ্রা। দেবীর আসার অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয় বাঙালির। 

 

Rath Yatra 24

Recommended For You

editorji | লাইফস্টাইল

ঘটা করে আলাদা দিন, অথচ ছক ভাঙলেই প্রশ্নের মুখে মায়েরা! মাতৃদিবসের কড়া সত্যি এটাই

editorji | লাইফস্টাইল

Digha Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? জেনে নিন রোমহর্ষক কাহিনী

editorji | লাইফস্টাইল

Jagannath: জগন্নাথই কৃষ্ণ, আবার তিনি আদিবাসীদেরও দেবতা! রইল নানা অজানা তথ্য

editorji | লাইফস্টাইল

Darjeeling Day tour: এক দুপুরে দার্জিলিং...বৈশাখের দাপটে পাহাড়ের রানি যেন একটুকরো স্বর্গ

editorji | লাইফস্টাইল

Offbeat Tabakoshi: মিরিকের কাছেই চা বাগানে ঘেরা তাবাকোশি যেন এক টুকরো স্বর্গ