১৩ মে, সিঙ্গুর তথা পশ্চিমবঙ্গবাসীর জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ এক তারিখ। আজ থেকে ১১ বছর আগে যেদিন এক সম্ভাবনার অপমৃত্যু হয়েছিল বর্তমান শাসকদলের হাত ধরে, বিরোধীরা প্রায়শই এমন অভিযোগে বিদ্ধ করেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। কিন্তু এবার সেই ১৩ মে তাঁর স্বপ্নের ন্যানো গাড়ির ছবি দিয়ে ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করলেন রতন টাটা। যাকে বর্তমান শাসকদলের প্রতি এক বার্তা হিসেবেই দেখছেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
ভারতীয় গাড়ির শিল্পে 'ন্যানো' যেন নিজেই এক সম্পূর্ণ অধ্যায়। এই গাড়ি সাক্ষী থেকেছে বহু বিচিত্র ইতিহাসের। টাটা মোটর্স এই গাড়ি নির্মাণের জন্য প্রথমে সিঙ্গুরকেই বেছে নিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ডামাডোলের কারণে ন্যানো কারখানা গুজরাটে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসেও এই গাড়ির ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমানে গাড়িটির উৎপাদন বন্ধ হলেও এখনও মানুষের মনে এখন ন্যানোর সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি হিসাবে জায়গা করে নিয়েছিল ন্যানো। যে জমি আন্দোলনের উপর ভর করে মমতার ক্ষমতায় আগমন, তার পরতে পরতে জড়িয়ে দু’টি নাম— সিঙ্গুর এবং সেই সূত্রে ন্যানো। রতন টাটার ‘স্বপ্ন’ এক লক্ষ টাকার গাড়ি শিল্পের জন্য সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে যে বিবাদ তৎকালীন শাসক এবং বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ছিল, তাকেই বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ দেন মমতা।
কিন্তু কীভাবে এল ন্যানো তৈরির ভাবনা? এত সস্তায় কীভাবে মধ্যবিত্তের গাড়ির স্বপ্ন পূরণ করেছিল টাটা? এই সব প্রশ্নের উত্তর এতদিন অধরা ছিল। এবার তার উত্তর দিলেন স্বয়ং রতন টাটা। তিনি তার ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডেলে তুলে ধরেন ন্যানো সম্পর্কে অজানা কাহিনী। রতন টাটা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে তিনি বর্ণনা করেন কীভাবে এই গাড়ি তৈরির জন্য তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
তিনি লেখেন, আমি দেখতাম কীভাবে একটা ছোট স্কুটারে বাবা-মায়ের মাঝে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে বসে যেত তাদের সন্তানেরা। সরু এবং পিচ্ছিল রাস্তায় তাঁদের এভাবে কষ্ট করে যাতায়াত করতে দেখে আমার খারাপ লাগত। সত্যি বলতে, এই জায়গা থেকেই আমি তাঁদের একটু স্বাচ্ছন্দ্য দিতে চেয়েছিলাম। যাতে স্কুটারের খরচেই একটা গাড়ি পান তাঁরা। স্কুল অফ আর্কিটেকচার(School of Architecture) এর পড়ার ফলেও এক্ষেত্রে বেশ লাভ হয়েছিল। আমি নতুন ধরনের ডিজাইনের উপর কাজ করতে শুরু করি।শুরুতে আমাদের মাথায় ছিল যে দু'চাকার বাহনকে আরও সুরক্ষিত করে তোলার। এর জন্য একটি ডিজাইনও তৈরি করা হয়। কিন্তু আসলে সেটি হয়ে গেল একটা ফোর হুইলার (Four Wheeler)। কিন্তু, তাতে কোনও দরজা বা জানলা ছিল না। তখনই আমরা ঠিক করি যে, এটি একটি গাড়িই হবে। ন্যানো তৈরি সময় একেবারে সাধারণ মানুষদের কথা প্রতি মুহূর্তে মাথায় রেখেছিলাম আমরা।