কাশ্মীরের মাটি বারবার ভিজেছে রক্তে। এই উপত্যকায় একের পর এক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন শত শত নাগরিক। কখনও শিখ সম্প্রদায়ের গ্রামে গণহত্যা, কখনও তীর্থযাত্রীদের উপর গ্রেনেড হামলা, আবার কখনও পর্যটকদের লক্ষ করে চালানো গুলিবর্ষণ। গত ২৫ বছরে ঠিক কতবার সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষরা? দেখে নিন এক নজরে।
চিত্তিসিংহপুরা গণহত্যা
২০০০ সালের ২১ মার্চ। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় গণহত্যা হয়। এই ভয়াবহ হামলায় সন্ত্রাসীরা অনন্তনাগ জেলার চিত্তিসিংহপুরা গ্রামে সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা চলে। এই হত্যালিলায় ৩৬ জন শিখ নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার উপর দায় চাপানো হয়। যদিও বিতর্ক ছিল।
অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা
ওই একই বছর ফের কেঁপে ওঠে ভূস্বর্গ। ২০০০ সালের অগাস্ট মাসে হামলা হয় নুনওয়ান বেস ক্যাম্পে। ওই বেস ক্যাম্পে ছিলেন অমরনাথ তীর্থযাত্রীরা। এই সন্ত্রাসী হামলায় মোট ৩২ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৪ জন ছিলেন তীর্থযাত্রী। হিজবুল মুজাহিদিন এই হামলার দায় স্বীকার করে।
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় হামলা
২০০১ সালেই ফের সন্ত্রাস হামলা হয়। অক্টোবর মাসে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা কমপ্লেক্স সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী হামলা চালায়। মোট ৩৬ জন নিহত হন এই হামলায়, যারা বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ নাগরিক। জৈশ-ই-মহম্মদ এই হামলার দায় স্বীকার করে।
লোয়ার মুন্ডায় আইইডি বিস্ফোরণ
একই বছর অর্থাৎ ২০০২ সালের ২৩ নভেম্বর দক্ষিণ কাশ্মীরের লোয়ার মুন্ডা এলাকায় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ হয়। মোট ১৯ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৯ জন নিরাপত্তা কর্মী, ৩ জন মহিলা এবং ২ জন শিশু।
নন্দিমার্গ গণহত্যা
২৩ মার্চ, ২০০৩ সালে ফের সন্ত্রাসবাদীরা হামলা করে পুলওয়ামা জেলার নন্দিমার্গ গ্রামে। মূলত কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের উপর হামলা চলে, এই ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ১১ জন মহিলা এবং ২ জন শিশু ছিল।
অমরনাথ তীর্থযাত্রী বাসে হামলা
১০ জুলাই, ২০১৭ সালে ফের সন্ত্রাস হামলা হয় অনন্তনাগে। সন্ত্রাসীরা কুলগামে অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের বাসের উপর হামলা চালায়। ৮ জন তীর্থযাত্রী নিহত হন এবং ১৮ জন আহত হন। এই হামলা ২০০০ সালের পর তীর্থযাত্রীদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা বলে মনে করা হয়। লস্কর-ই-তৈবা এই হামলার দায় স্বীকার করে।
পাহেলগাঁও পর্যটকদের উপর ভয়াবহ হামলা
২২ এপ্রিল, ২০২৫ ফের টার্গেট অনন্তনাগ। কাশ্মীর উপত্যকায় ২০১৯ সালে আর্টিকেল ৩৭০ বাতিলের পর এটি সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা। বৈসরণ মিডো সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং ১৭ জন আহত হন। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স নামে একটি অখ্যাত গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে। যদিও এই হামলা লস্কর-ই-তৈবা এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর বলে মনে করা হচ্ছে।