অযোধ্যায় উদ্বোধন হতে চলেছে রাম মন্দির। দীর্ঘদিন বিতর্ক চলার পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের নির্দেশে রাম মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের ও বিদেশের প্রতিনিধিরা। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ওই বিতর্ক থেকে কীভাবে রাম মন্দির তৈরি হল? জেনে নেওয়া যাক সেই ইতিহাস-
১৫২৮ সাল- কথিত আছে মুঘল সাম্রাজ্য চলাকালীন মীর বাকি বাবরি মসজিদ তৈরি করেছিলেন।
১৮৮৫ সাল- মহন্ত রঘুবীর দাস ফইজাবাদ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাম জন্মভূমির স্থানে বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। যদিও মামলা খারিজ করে দিয়েছিল আদালত।
২২ ডিসেম্বর ১৯৪৯ সাল- বিতর্কিত কাঠামোর বাইরের একটি জায়গায় রামের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৫০ সাল- ফইজাবাদ আদালতে ফের একটি মামলা দায়ের করেন গোপাল সিমলা বিশারদ নামে এক ব্যক্তি। যে রামের মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে পুজো করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন।
১৯৫৯ সাল- নিরমোহী আখরা ওই বিতর্কিত জায়গা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ফের একটি মামলা দায়ের করে।
১৯৬১ সাল- এবার বিতর্কিত জমি মুসলিমদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেন এক ব্যক্তি। তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
১৯৮১ সাল- উত্তরপ্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের তরফে একটি মামলা দায়ের করা হয়। দাবি করে ওই জমি তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।
১৯৮৬ সাল- দীর্ঘ শুনানির পর আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয় ওই জায়গায় পুজো করতে পারবেন হিন্দুরা।
১৯৮৯ সাল- বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেওকি আগরওয়াল একটি মামলা দায়ের করেন। এবং জমি ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান।
১৯৯২ সাল- বিতর্কিত জমিতে গড়ে ওঠা কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়। হাজার হাজার করসেবক ওই বিতর্কিত স্থানে সেদিন জড়ো হয়েছিলেন।
১৯৯৩ সাল- কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি আইন পাস হয়। যার নাম "Acquisition of Certain Area at Ayodhya Act"। মূলত ওই আইন প্রয়োগ করেই বিতর্কিত জমির দখল নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই বছরই এলাহাবাদ হাইকোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দাখিল করা হয়।
২৪ অক্টোবর ১৯৯৪ সাল- হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দেয় যে স্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তা মুসলিমদের নয়।
২০০২ সাল- এলাহাবাদ হাইকোর্টে ফের একটি মামলার শুনানি শুরু হয়। বিতর্কিত জমির অধিকারী কারা সেই নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
১৩ মার্চ ২০০৩ সাল- এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় ওই বিতর্কিত এলাকায় কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা যাবে না। কোনও ধর্মের মানুষই ওই জমি ব্যবহার করতে পারবেন না।
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১০ সাল- হাইকোর্ট একটি সিদ্ধান্তে আসে। ওই বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং নিরমোহী আখড়ার মধ্যে ভাগ করে দেয়।
৯ মে ২০১১ সাল: ২০১০ সালে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সাল- বিজেপি নেতা সুভ্রমণিয়ম স্বামী সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। তাঁর আবেদন ছিল বিতর্কিত জমিতে রাম মন্দির তৈরির অনুমতি দিতে হবে।
২১ মার্চ ২০১৭ সাল- তৎকালীন বিচারপতি জে এস খেহর পুরো বিষয়টি আদালতের বাইরে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।
৭ অগাস্ট ২০১৭ সাল- ১৯৯৪ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে উত্তর প্রদেশ সিয়া ওয়াকফ বোর্ড।
২০ নভেম্বর ২০১৭ সাল- উত্তর প্রদেশ সিয়া ওয়াকফ বোর্ডের তরফে আদালতের কাছে জানানো হয় অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি করা হোক এবং লখনউ-এ মসজিদ তৈরির অনুমতি দেওয়া হোক।
১ ডিসেম্বর ২০১৭: সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে ৩২ টি সংগঠন। ওয়াকফ বোর্ড ও রাম মন্দির ট্রাস্টির মধ্যে জমি ভাগ করে দেওয়ার বিষয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে তারা।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮: সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি শুরু হয়।
৬ জুলাই ২০১৮ সাল: উত্তর প্রদেশ সরকার আদালতে জানান, কয়েকটি মুসলিম সংগঠন শুনানি প্রক্রিয়া দীর্ঘ করার চক্রান্ত করেছিল।
২০ জুলাই ২০১৮ সাল: রায়দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত।
২০১৯ সাল: ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করে সুপ্রিম কোর্ট। যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।
৯ নভেম্বর ২০১৯ সাল: প্রায় ৭০ বছর ধরে চলতে থাকা টানাপোড়েনের ইতি হয়। রায় দান করে সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি ট্রাস্ট গঠন করে দেওয়া হবে। এবং এবং তারা ২.৭৭ একর জমি পাবে। যেখানে রাম মন্দির গড়ে উঠবে। পাশাপাশি মসজিদ তৈরির জন্য ৫ একর জমি দেওয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত।
৫ অগাস্ট ২০২০: রামমন্দিরের শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
২২ জানুয়ারি ২০২৪: রাম মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।