ফারাক ঠিক ২৫ বছরের। সিকি শতাব্দী পর গাইসালকে ফের মনে করাল উত্তরবঙ্গের রাঙাপানি। মাত্র এক বছরের মধ্যেই আরও একটা বড় দুর্ঘটনার কবলে ভারতীয় রেল ? বাজেট আসে, বাজেট যায়। বরাদ্দ বেড়েই চলে। কিন্তু সংস্কার, আধুনিকীকরণ এই শব্দগুলি থেকে যায় অলীক হয়েই। সোমবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর সেই কথাগুলি ফের উঠে আসছে।
আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে রেলমন্ত্রী থাকার সময় দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু টোটকা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরামর্শ মতো সেই কাজ শুরুও করেছিল রেল। প্রশ্ন উঠছে, গত ১৫ বছরে আধুনিকীকরণের সেই কাজ কী শেষ করতে পেরেছে তারা ? কারণ, মমতা পরবর্তী সময়ে রেলের দায়িত্বে অনেকেই ছিলেন এবং আছেন। কিন্তু কাজের কাজ কী কিছু হয়েছে ? ওড়িশার বাহানাগা স্টেশনে করমণ্ডল দুর্ঘটনা বা রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনার পর রেলকে প্রশ্ন করা হলে, তার সদুত্তর নেই ভারতের সবচেয়ে বড় সরকারি পরিবহণ সংস্থার কাছে। অথচ আম ভারতবাসীর কাছে আজও গণপরিবহণের একমাত্র ভরসা ভারতীয় রেল।
একটা দুর্ঘটনা, আবার একটা তদন্ত কমিটি। যার রিপোর্ট কবে পেশ, কারুর জানা নেই। কারণ, একবছর পরেও করমণ্ডলের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করতে পারেনি রেল মন্ত্রক। এমনকী পারেনি এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইও। কিছু মানুষের শাস্তি হয়েছে। এইটুকু। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরেও সেই একই প্রশ্ন, কী করে একই লাইনে চলে এল দুটি ট্রেন ?
এই প্রশ্ন তো আজকের নয়, ভারতীয় রেলের দর্প চূর্ণের ইতিহাস ঘাঁটতে গেলে বারবার এই প্রশ্নই উঠে এসেছে। তাহলে চলুই একবার ফিরে দেখা যাক রেলের ইতিহাসে সেই দুর্ঘটনাগুলিকে....
৬ জুন ১৯৮১
--------------
বিহারের বাগমতি নদীর উপরে লাইচ্যুত হয় মানসি-সরসা প্যাসেঞ্জার, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় ঝড়ের জেরে বেলাইন হয় ওই ট্রেন, সরকারি মতে মৃত ২৩৫, বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৮০০
২০ অগাস্ট, ১৯৯৫
-------------------
বিহারের ফিরোজাবাদে মুখোমুখি সংঘর্ষ কালিন্দি এবং পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসের, তদন্তে জানা যায় লাইনে চলে এসেছিল একটি নীলগাই, ঘটনায় মৃত্যু হয় ৩৫৮ জনের, বেসরকারি মতে ছিল ৪০০ জন
২ জুন, ২০২৩
----------------
ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল, বেঙ্গালুরু এবং একটি মালগাড়ি মিলিয়ে তিনটি ট্রেনের বিপর্যয়ে প্রাণ যায় ২৯৬ জনের, এই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে, দায়ী করা হয়েছে সিগন্যালিং ব্যবস্থাকে
২ অগাস্ট, ১৯৯৯
-------------------
উত্তরবঙ্গের গাইসালে সিগন্যাল ভেঙে মুখোমুখি সংঘর্ষ ব্রক্ষপুত্র মেল এবং আওয়াধ অসম এক্সপ্রেসের, মৃত্যু ২৮৫ জনের, বেসরকারি মতে ৩০০, রেলমন্ত্রী হিসাবে পদত্যাগ নীতীশ কুমারের
২৬ নভেম্বর ১৯৯৮
-----------------
পঞ্জাবের খান্নায় রেল লাইন ভেঙে বিপত্তি, জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসের সঙ্গে ফ্রন্টিয়ার রেলের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ২১২ জন
১০ সেপ্টেম্বর ২০০২
----------------------
বিহারের রফিগঞ্জে রেলে দর্পচূর্ণ, দুর্ঘটনার কবলে রাজধানী এক্সপ্রেস, সরকারি মতে মৃত ১৩০, বেসরকারি মতে ২০০ জন, তদন্ত মাওবাদী নাশকতার দাবি কেন্দ্রের
২৮ মে, ২০১০
---------------
পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামে মালগাড়ির সঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় মৃত ১৪৮ জন, বেসরকারি মতে মৃত ২০০ জন, তদন্তে নাশকতার দাবি কেন্দ্রের
এত ঘটনা, এত মৃত্যু। তারপর কী ? তদন্ত চলছে। খুব তাড়াতাড়ি তা জমা দেওয়া হবে। সঙ্গে প্রাণের মূল্য ক্ষতিপূরণ।