পৃথিবীতে এমন অনেক কিছুই আছে, যা কল্পনারও বাইরে। এখন গুগল আর্থের সাহায্যে জুম ডাউন করে নিজের বাড়ির ছাদ থেকে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের অবস্থান দেখা যায়। গুগল বা AI-তে সার্চ করে জানা যায় না, এমন জিনিসও কম। কিন্তু সত্যিই কি ঘরে বসে সব জানা সম্ভব কি! হিমালয়ের কোলে একটি হ্রদ আছে, যার নাম রূপকুন্ড। যে হ্রদের জলে পড়ে থাকে হাজার হাজার মানুষের হাড়গোড়, করোটি, দেহাংশ। কী হত সেই লেকে! ওই হ্রদে কোন অভিশাপ আছে! কীভাবে বারবার এত মানুষ এই হ্রদে এসে প্রাণ হারিয়েছিলেন!রূপকুন্ডের সঙ্গে অজানা কোন রহস্য জড়িয়ে!
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুট উঁচু। উত্তরাখণ্ডের হিমালয়ের এই অঞ্চলে মানুষের যাতায়াত নেই বললেই চললে। সালটা ১৯৪২। প্রথম বার এই হ্রদ আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ ভারতের ফরেস্ট অফিসার এইচ কে মাধওয়াল। পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে তিনি যখন প্রথম ওই হৃদ দেখেন, চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় তাঁর। হ্রদের জলে মানুষের হাড়গোড়, মাথার খুলি। ওই অফিসারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারকে ওই রহস্যময় হ্রদের কথা জানায়। এইচ কে মাধওয়াল জানান, ওই হ্রদে কমপক্ষে ৩০০-৮০০ মানুষের দেহাবশেষ আছে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারও এই রহস্যের কোনও সমাধান করতে পারেননি। ১৯৫০ সালের পর থেকে হিমালয়ের কঙ্কাল হ্রদ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ৮০ বছর ধরে কঙ্কাল হ্রদের রহস্য অধরাই থেকে গিয়েছিল।
হিমালয়ের কোলে এমন সুন্দর একটা হ্রদে কারা এসে আত্মহত্যা করল! নাকি এই হ্রদে ঘটেছিল কোনও গণ আত্মহত্যা! বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উঠে আসে। তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় তত্ত্বটি হিমালয়ের হ্রদে তীর্থযাত্রীদের মৃত্যু। রূপকুণ্ড হিন্দু তীর্থযাত্রীদের জন্য পুন্য ক্ষেত্র। নবম শতকে রূপকুন্ডে তীর্থ করতে যেতেন পুন্যার্থীরা। ১২ বছর অন্তর সেই সময় 'নন্দা দেবী জাত যাত্রা' হত। তখনই এই হ্রদে কোনও অজানা কারণে মৃত্যু হয় তীর্থযাত্রীদের।
২০০৪ সালে এই একদল বিজ্ঞানী রূপকুন্ডে পাওয়া দেহাবশেষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এই দেহাবশেষ জাপানের সেনাবাহিনীর। ১৯৪২ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এই রূপকুন্ডে আটকে পড়ে জাপানি সেনারা। সিল্ক রুটে যাত্রা করার সময় রূপকুন্ডে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ওই জাপানি সেনারা। জানা যায়, মৃতদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ব্রিটিশ ফরেস্ট অফিসারের মতে, ওই হ্রদে কোনও কঙ্কাল আস্ত ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে জলে ভিজে থেকে হাড়গুলির গায়ে শ্যাঁওলাও পড়ে গিয়েছে। হ্রদের ধার থেকে কিছু লেদারের জুতো,বাঁশের তৈরি ছাতা, কাঁচের চুড়িও উদ্ধার হয়েছে।
২০১৯ সালে রূপকুন্ড থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৮টি হাড়গোড়গুলির নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষা হয়। যা নিয়ে ফের নতুন করে রহস্য তৈরি হয়েছে। ৩৮ জনের মধ্যে ২৩ জনের ডিএনএ রিপোর্ট বলছে, তাঁরা ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের মানুষ। ২৩ জন ভূমধ্যসাগরের ওপারের মানুষ। তাই হিমালয়ের কোলে এই মৃত্যুর হ্রদ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন রহস্য।
এখন ট্রেকারদের অন্যতম ডেস্টিনেশন 'রূপকুন্ড'। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকরা যান উত্তরাখণ্ডের এই হ্রদে। কিন্তু কীভাবে এই হ্রদ এত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠল, সেই রহস্য এখন অজানাই থেকে গিয়েছে।