বছরের পর বছর ধরে একই অঙ্গে বহু নাম। গত একদশকের বেশি সময় ধরে বারবার নাম বদলে তিনি গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে বেরিয়েছেন। বিশেষ করে, ওড়িশা-ছত্তীশগড় সীমানা এলাকায় তাঁর আধিপত্য ছিল একচ্ছত্র। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতে ছত্তীশগড়ের গারিয়াবান্দা জেলার গভীর জঙ্গলে তাঁকে ঝাঁঝরা করল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের অটোমেটিক রাইফেলসের বুলেট।
তাঁকে ধরতে গত কয়েক বছরে হিল্লে হয়ে খুঁজছিল যৌথবাহিনী। মাথার দাম ঠিক করা হয়েছিল ১ কোটি টাকা। মঙ্গলবার রাতের এই গানব্যাটেলের পর বাহিনীর তরফের জানানো হয়েছে, জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির প্রবীণ নেতা চলপতির দেহ। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কিষাণজি পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মাওবাদীরা এত বড় কোনও নেতাকে হারায়নি।
বাহিনীর দাবি, গত কয়েকদিন ধরেই এই গভীর জঙ্গলের মধ্যে নজরদারি চলছিল। নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয়েছিল অপারেশন। প্রাথমিক ভাবে মাওবাদীদের গুলিতে পিছু হটেছিল বাহিনী। সূত্রে দাবি, রাত বাড়ার সঙ্গে পাল্টা দাপট বাড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোর নাগাদ মাওবাদী নেতা চলপতি-সহ ২০ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়। ওই তালিকায় এমন বেশ কয়েকজন রয়েছেন, যাঁদের চলপতির দেহরক্ষী বলেও দাবি করা হয়েছে।
অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরে বড় হওয়া চলপতির। গেরিয়া যুদ্ধে দক্ষ এই মাওবাদী নেতা খুব অল্পসময়ের মধ্যে হয়ে ওঠেন এক গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী নেতা। ২০১৮ সাল থেকে তিনি ছিলেন পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড। একধিক খুন ও নাশকতার অভিযোগ ছিল ৬০ বছরের এই নেতার বিরুদ্ধে। মেধাবী চলপতি একসময় অপারেট করতেন মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তেলঙ্গনা এবং অন্ধ্রের বিস্তৃর্ণ এলাকায়।
ওড়িশা সীমানা থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরেই কুলারিঘাট রিজার্ভ ফরেস্ট। গত কয়েকদিন ধরে এই জঙ্গলের মধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন মাওবাদী নেতা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর অফিসারদের দাবি, ছত্তীশগড়ের উপর বড়সর নাশকতার ছক ছিল তাদের। চলপতিকে খতম করে সেই দাবিই করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
২০২৬ সালে মার্চ। এই সময়ের মধ্যে ভারতকে মাওবাদী মুক্ত করতে হবে। বাহিনীর কাছে এই সময়সীমা বেধে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তীশগড়ের জঙ্গলে জওয়ানদের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, মাওবাদী মুক্ত ভারত করতে লক্ষ্যে অবিচল কেন্দ্রীয় সরকার। আর সেই ভাবেই কাজ হচ্ছে।
চলপতির মৃত্যুর পর ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের শিরদাঁড়া কি ভেঙে গেল ? স্পষ্ট কর বলতে না পারলেও কেন্দ্রের দাবি, বছরের শুরুতে ছত্তীশগড়ে ইতিমধ্যেই ৪০ মাওবাদীর মৃত্যুর হয়েছে। গত একবছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২১৯। গত বছর মাওবাদীদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১৮ নিরাপত্তারক্ষী। কেন্দ্রীয় ডেটায় দাবি, প্রাণ গিয়েছে ৬৫ জন সাধারণের।