১৯৪৭-এর ১৪ অগাস্ট মধ্যরাত। দিল্লির লালকেল্লায় উঠছে তিরঙ্গা। জন্ম হচ্ছে স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তে জাতির জনক মহাত্মা কই? সব উদযাপন থেকে দূরে, প্রচারের আড়ালে মহাত্মা তখন কলকাতার বেলেঘাটায়।
কলকাতায় তখন দেশভাগের যন্ত্রণা, বাংলা ভাগ হচ্ছে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির আনন্দ মুছে দিচ্ছে প্রিয়জন, ভিটে মাটি ছাড়ার দীর্ঘশ্বাস। ২৫ দিনের জন্য গান্ধীজি চলে এলেন কলকাতায়। তাঁর ঠিকানা হল, ১৫০বি বেলেঘাটা মেইন রোড-এর হায়দরি মঞ্জিল। ১২ অগাস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বাড়িতেই কেটেছিল মহাত্মার। স্বাধীনতা প্রাপ্তির দিনে মুখে জলও তোলেননি মহাত্মা, তখন তাঁর ৭২ ঘন্টার- উপবাস চলছে। এমন যন্ত্রণার স্বাধীনতা, দাঙ্গা-হিংসার স্বাধীনতা তো দেখতে চাননি মহাত্মা।
জাতির জনকের বিষণ্ণ স্মৃতি মাখা সেই হায়দরি মঞ্জিল এখন ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় স্মারক ভবন’। সেখানে রয়েছে গান্ধীজির ব্যবহৃত নানা জিনিস, তাঁর জীবনের নানা কথা, বাণী। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। গান্ধী মনে করতেন চরকা একটি অস্ত্র। পরমাণু বোমার মতো দানবিক অস্ত্র নয়, দৈব অস্ত্র। চরকা এমন এক হাতিয়ার, যা ভিতর থেকে বদলে দিতে পারে মানুষকে। দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতেও পারে চরকা। গান্ধীর ব্যবহৃত চরকাও রাখা আছে বেলেঘাটার গান্ধী ভবনে।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি। অথচ ১৫ অগাস্টের আনন্দ-উৎসবের অংশ হতে পারেননি তিনি। এক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মলগ্নে জাতির জনকের কেটেছিল নিভৃতে, বিষণ্ণতায়, সে কথা-ই মনে করিয়ে দেয় হায়দারি মঞ্জিল, আজকের গান্ধী ভবন।