ট্রেনে করে কোথাও ঘুরতে যাবেন। এসি কোচের টিকিট কেটেছেন। নিজের জন্য বরাদ্দ সিটে বসে বা শুয়ে রেলের দেওয়া কম্বল গায়ে দিতে গিয়ে দেখলেন, সেই কম্বলের গায়ে দাগ লেগে আছে! বা, কম্বলের মধ্যে থেকে দুর্গন্ধ আসছে কোনও? এমন অভিজ্ঞতা ভারতীয় রেলের এসি কোচের যাত্রীদের কাছে খুব অপরিচিত নয়। প্রায় প্রতিদিনই এই নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ জমা পড়ে ভুরি ভুরি! বারবার প্রশ্নও ওঠে যে, টিকিটের মধ্যেই যখন দাম ধরা থাকে কম্বল বা বেডশিটের, তাহলে তা কেন পরিষ্কার থাকবে না?
বিষয়টি নিয়ে মাঝেমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অসন্তোষের কথাও জানান যাত্রীদের অনেকেই। রেলের এসি কোচে যে কম্বল দেওয়া হয়, তা কতবার কাচা হয় মাসে? মাসখানেক আগেই তথ্যের অধিকার আইন বা একটি RTI আবেদনের ভিত্তিতে রেল কর্তৃপক্ষ যে জবাব দিয়েছিল, তা নিয়ে ভ্রূ কুঁচকেছিলেন অনেকেই।
এবার জবাব দিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব স্বয়ং।
ট্রেনের যাত্রীদের জন্য দেওয়া কম্বলগুলি মাসে অন্তত একবার করে ধোয়া হয় এবং একটি অতিরিক্ত বেডশিটও দেওয়া হয় বেডরোল কিটে কভার হিসাবে ব্যবহার করার জন্য, বুধবার লোকসভাকে এ কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ কুলদীপ ইন্দোরার প্রশ্নের জবাবে অশ্বিনী বৈষ্ণব এই কথা জানান। কুলদীপ ইন্দোরা প্রশ্ন করেছিলেন, "ভারতীয় রেলের যাত্রীরা টিকিট কেটে যাত্রা করেন একটা ন্যূনতম সুরক্ষার আশা করে এবং তাঁদের কাটা টিকিটে ধরা থাকে রেলের দেওয়া কম্বল আর বেডশিটের দামও। যাত্রীদের স্বাস্থ্যের কথা কি আদৌ ভাবে রেল? যে কম্বলগুলো দেওয়া হয় যাত্রীদের, তা কতবার পরিষ্কার করা হয় মাসে"?
একটি লিখিত উত্তরের মাধ্যমে রেলমন্ত্রী জানান, "রেলের বর্তমান নীতি অনুসারে, ভারতীয় রেলে ব্যবহৃত কম্বলগুলি অনেকটাই হালকা। এগুলো ধোয়া সহজ এবং গায়ে দিয়ে রাখতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় যাত্রীদের, সেই কথা ভেবেই এগুলো তৈরি করা হয়"।
রেলমন্ত্রী যে কথাই বলুন না কেন, দূরপাল্লার ট্রেন জার্নিতে যাঁরা নিজের জন্য বরাদ্দ সিটে বসে এসি কোচে রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে রেলের দেওয়া ব্রাউন পেপারের প্যাকেটের বেডিং সেট খুলে চাদর আর কম্বল খুলে শুয়ে পড়তে অভ্যস্থ- রেলমন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্য জেনে তাঁরা আরও বেশি বিব্রত হবেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল।
যদিও, শুধু কম্বল সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই নয়। যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য এবং যাত্রী-নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ঠিক কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে রেল, সে কথাও জানান রেলমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই ভারতীয় রেলের কম্বল ও বেডশিটে ব্যবহার করার জন্য নতুন লিনেন সেট আনা হয়েছে। সেই লিনেন যাতে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধোয়া হয় এবং এই লিনেন ধোয়ার কাজে মেশিন এবং রাসায়নিকও যে সমস্ত বিধি মেনেই ব্যবহার করা হচ্ছে, সে কথাও স্পষ্ট করে দেন অশ্বিনী বৈষ্ণব।
'RailMadad Portal-এ এই সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই দায়ের করা অভিযোগগুলির ভিত্তিতে বিভাগীয়স্তরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কম্বল ও বেডশিট নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে রেল", বলেন রেলমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবার কাশ্মীরেও চলবে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষ। ২০২৫-এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে কাশ্মীরে পৌঁছে যেতে পারবেন পর্যটকরা। ভারতীয় রেল জানিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে রাজধানী দিল্লি থেকে কাশ্মীর অবধি চলবে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। দিল্লি থেকে কাশ্মীরে পৌঁছনোর প্রথম স্লিপার ট্রেন হবে এটি। এই প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে খরচ করেছে ৩৭,০১২ কোটি টাকা। এই ট্রেনে ১১টি এসি থ্রি টিয়ার কোচ, ৪টি এসি টু টিয়ার কোচ ও একটি ফার্স্ট এসি কোচ থাকবে।প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লি থেকে থ্রি-টিয়ারে ভাড়া হবে ২০০০ টাকা। টু-টিয়ারে ভাড়া হবে ২৫০০ টাকা। প্রথম শ্রেণির কুপের ভাড়া হতে পারে ৩০০০ টাকা।