ট্রেন সফর বললেই, চোখে ভেসে ওঠে শহর ছাড়িয়ে একের পর এক গ্রাম। বিস্তীর্ণ সবুজ, অজানা কত জনপদ। প্রত্যেকটি স্টেশন যেন নতুন করে জীবন চেনায়। দেশের শিরা-উপশিরা ভেদ করে আরও গভীরে ছুটে চলে ভারতীয় রেল। দেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রেলওয়ে। তবে দীর্ঘ ট্রেন সফর অনেক সময়ই ক্লান্তিকর হয়ে যায়। কম সময় হোক বা লম্বা সফর, ভারতীয় রেলে যাত্রা মানেই কিন্তু জমিয়ে খাওয়া দাওয়া। শুধু ট্রেনের ক্যাটারিং মেনুই নয়। বিভিন্ন স্টেশন এক একটি খাবারের কেন্দ্রস্থল। তবে বিভিন্ন স্টেশনের বিখ্যাত খাবার পরিবেশন করেন ভারতীয় রেলের ক্যাটারিং সংস্থা আইআরসিটিসিও। বাংলার কষা আলুর দম হোক বা বিহারের লিট্টি-চোখা। ওড়িশার সামোসা থেকে দক্ষিণ ভারতের ধোসা, ইডলি, সবই পাওয়া যায় সিটে বসেই।
ট্রেন সফরে সবথেকে বেশি চাহিদা থাকে চা বা কফির। দেশের অধিকাংশ মানুষেরই দিনের অনেকটা সময় চা ও কফি লাগে। তাই ট্রেন সফরে সবথেকে বেশি পছন্দের তালিকায় অসমের লাল চা। গুয়াহাটি স্টেশনে এই চা সবথেকে বেশি অর্ডার হয়। লেবু, চিনি দিয়ে এই চায়ের কোনও জবাব নেই। এরপরই আইআরসিটিসির তালিকায় রয়েছে বাংলার কষা আলুর দম। খড়গপুর জংশনে সবথেকে বেশি অর্ডার হয় এই ডিশ। হাওড়া স্টেশনে এসে আইআরসিটিসি-তে সবথেকে বেশি অর্ডার দেওয়া হয় সন্দেশ।
ধরুন আপনি এবার উত্তর ভারতের দিকে যাবেন। বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে ছুটবে আপনার ট্রেন। সেই সময় কী অর্ডার করবেন! পটনা জংশনে যদি ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকে, তা হলে সব থেকে চাহিদা থাকে লিট্টি-চোখা। বিহারের বাসিন্দা না হলেও, এই ডিশের চাহিদা থাকে সবথেকে বেশি। আইআরসিটিসি জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডে ট্রেন ঢুকলে টাটানগর বা জামশেদপুর জংশনে পছন্দের ডিশ ফিশ কারি। এই ডিশে থাকে সাদা ভাত। পেঁয়াজ, টমাটো, গাজর, ধনেপাতা দিয়ে তৈরি স্যালাড। সঙ্গে পরিবেশন করা হয় ফিশ কারি।
নিউদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে আলু চাট, আলু টিক্কিও বিখ্যাত। আইআরসিটিসি জানিয়েছে, রতলাম, টান্ডালা স্টেশনেও দিল্লির এই বিখ্যাত ডিশের চাহিদা থাকে। উত্তরপ্রদেশে যদি আপনি ট্রেনযাত্রা করেন, বরেলি স্টেশন মিস করবেন না। এই স্টেশনের মুগডালের দেশজোড়া খ্যাতি। আর ছোলে-বাটুরে খেতে হলে যেতে হবে পঞ্জাবের জলন্ধর সিটি জংশনে। আর অমৃতসর জংশন আসার আগেই আপনি একটা লস্যি অর্ডার দিয়ে রাখতে পারেন। এমন লস্যির স্বাদ আর ভূভারতে খুঁজে পাবেন না। আর আপনার ট্রেন যদি রাজস্থানে যায় একটি ডিশ অবশ্যই ট্রেনে বসে অর্ডার করতে পাারেন। আজমের স্টেশনের কাড়ি কচুরি। গুজরাতে যদি আপনার ট্রেন যায়, তা হলে সুরেন্দ্রনগর স্টেশনে পাওয়া যায় উটের দুধের চা। যদি চা প্রেমী হন, ওই চা একবার চুমুক দিতে ভুলবেন না। আর মহারাষ্ট্রে ট্রেন সফর করলে মুম্বই সেন্ট্রাল স্টেশনের খাবার মিস করবেন না। ওই স্টেশনে বাটাটা বড়া ও পাওভাজি অর্ডার করতে ভুলবেন না।
বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারতের পাঁচ রাজ্যে ট্রেন যাত্রা করলে আপনাকে ওড়িশা পার করতেই হবে। ওড়িশা ও অন্ধ্রের সীমান্ত থেকেই ট্রেনে শুরু হয়ে যায় দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। বিজয়াড়া স্টেশনে ট্রেন এলে অবশ্যই ইডলি অর্ডার করবেন। আইআরসিটিসি জানাচ্ছে, এই ইডলির চাহিদা অনেকটাই বেশি। গুন্টাকাল জংশনের সবথেকে বেশি অর্ডার দেওয়া খাবার বেন পোঙ্গল ও উথাপ্পাম। তবে দক্ষিণ ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় ডিশ রাভা ধোসা। চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশনে গেলে এই ধোসা মিস করবেন না। কেরালার এর্নাকুলামে সবথেকে বেশি অর্ডার দেওয়া ডিশ পাঝাম পরী। কলা কেটে ব্যাসনের ব্যাটার মাখিয়ে তেলে ডুবিয়ে ভাজা হয়। এটি কেরালার অন্যতম বিখ্যাত ডিশগুলির মধ্যে একটি। ট্রেন যদি তেলেঙ্গানার সেকেন্দ্রাবাদ স্টেশনে যায়, তা হলে বিরিয়ানি অর্ডার করকে ভুলবেন না। হায়দরাবাদের বাসমতী চালের চিকেন বিরিয়ানি সবথেকে বেশি অর্ডার দেওয়া ডিশগুলির মধ্যে অন্যতম।