তাঁর আসল নাম হেমচন্দ্র দাস কানুনগো। তাঁকে 'অগ্নিযুগের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য' বলে অভিহিত করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম,। ১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্ট থেকে তিনিই ভারতবর্ষের প্রথম জাতীয় পতাকার স্কেচ তৈরি করেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে প্রায় নীরব এই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির ঢেউয়ে ভাসতে থাকা ভারত ও তার ইতিহাস।
১৮৭১ সালে তদানীন্তন নারায়ণগড় থানার রাধানগর গ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা ক্ষেত্রমোহন, মা কমলেকামিনী দাস কানুনগো। মেদিনীপুরে কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা, কলেজে রসায়নের ইনষ্ট্রাক্টার, জেলাবোর্ডের চাকরি কিছুদিন করেই ছেড়ে দিয়ে হেমচন্দ্র নাম লেখান অনুশীলন সমিতিতে।
ভগিনী নিবেদিতার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি এবং তাঁর দুই বন্ধু জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু বদ্ধপরিকর হন ইংরেজকে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ভারতছাড়া করবেন।
১৯০৫-এ 'ভারতছাড়ো আন্দোলনে' ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯০৬ সালেই তিনি ইউরোপ যাত্রার সিদ্ধান্ত নেন। উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের বিপ্লবীদের কাছ থেকে সশস্ত্র সংগ্রামের তথ্য সংগ্রহ এবং প্যারিসে বোমা তৈরির কৌশল শেখা।
১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে বিশ্ব সমাজতন্ত্রী সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে মাদাম কামা যে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা তুলে ধরে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বক্তব্য রেখেছিলেন তার স্কেচ তৈরি করেছিলেন হেমচন্দ্র কানুনগো। সেটাই দেশের প্রথম জাতীয় পতাকা। হেমচন্দ্র কানুনগোর স্কেচ করা জাতীয় পতাকার উপরে ছিল বিপ্লবের প্রতীক লাল রং। এই রঙের উপর ছিল তদানীন্তন দেশের আটটি প্রদেশের প্রতীক আটটি আধফোঁটা পদ্ম। মাঝে ছিল স্বদেশপ্রেমের প্রতীক গেরুয়া। এই রঙের মধ্যে দেবনাগরী হরফে লেখা ছিল 'বন্দেমাতরম'।
পরাধীন ভারতবর্ষে সেটাই প্রথম জাতীয় পতাকা। এখনও পুনের তিলক মন্দিরে এই স্কেচ রাখা আছে।
১৯৫১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন হেমচন্দ্র আজ উপেক্ষিত, তেমনি রাধানগর গ্রামে উপেক্ষিত তাঁর ভিটেও। গ্রামের মানুষের অভিযোগ, হেমচন্দ্রের দেখানো পথে দেশ স্বাধীন হলেও তাঁকে মর্যাদা দিতে ভুলে গেছে আমাদের দেশ।