শুরু হল মহাকুম্ভ মেলা। পৌষ পূর্ণিমার প্রথম দিনের পূণ্যস্নান করলেন অসংখ্য পূণ্যার্থীরা। সকাল থেকে স্নান করলেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়িও। এই মহাকুম্ভ মেলাকে সভ্যতার সবচেয়ে বড় জনসমাগম বলে উল্লেখ করছেন আয়োজকরা। মহাকুম্ভ মেলার আয়োজনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। এই মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণকে 'বিশ্বের বৃহত্তম টেন্ট সিটি' বলে উল্লেখ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যে কোনও মুহূর্তে সেখানে ৫০ লক্ষ থেকে এক কোটি মানুষের থাকার বন্দোবস্ত করা যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মহাকুম্ভের এই বিশেষ স্নান 'শাহি স্নান' নামেও পরিচিত। এছাড়া, এই বছরে এক বিরল যোগ তৈরি হয়েছে মহাকুম্ভের স্নানে। যা ১৪৪ বছরের মধ্যে হল প্রথমবার। এই মহাকুম্ভ স্নানের সময় সূর্য, চন্দ্র ও বৃহস্পতির যে অবস্থান তৈরি হয়েছে, তা সমুদ্র মন্থনের সময়েও তৈরি হয়েছিল।
1) পুরাণ অনুযায়ী, ১২ দিন অমৃত পাওয়ার জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এই ১২ দিন একজন মানুষের কাছে ১২ বছরের সমান। এই কারণেই প্রতি ১২ বছরে মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়।
2) জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, সূর্য এবং বৃহস্পতি উভয়ই সিংহ রাশিতে থাকলে, নাসিকে মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতি সিংহ রাশিতে এবং সূর্য মেষ রাশিতে থাকলে উজ্জয়নে মহাকুম্ভের আয়োজন করা হয়।
৩) ২০২৫ সালে ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা।
৪) মহাকুম্ভ উপলক্ষে ৪০০০ হেক্টর মেলা এলাকায় ভক্তদের গায়ে গোলাপফুল বর্ষণ করা হচ্ছে।
৫) ৪০,০০০ পুলিশ অফিসার মোতায়েন হয়েছে মেলা এলাকায়।
৬) মহাকুম্ভে আসার জন্য কয়েক হাজার বাস তৈরি রাখা হয়েছে। থাকছে ট্রেন এবং বিমানযাত্রার ব্যবস্থাও।
৭) উত্তরপ্রদেশ সরকার সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাস তৈরি রেখেছে। যা ৭৫টি পয়েন্ট থেকে ছাড়বে।
৮) ৫৫০টি শাটল বাসের ব্যবস্থাও থাকছে। এগুলি বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে প্রয়াগরাজ জেলায় আসবে।
৯) দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকে আসার জন্য বাসের ব্যবস্থা।
১০) ১৩ হাজার স্পেশাল ট্রেন দেশজুড়ে চলবে।
১১) ৫০টি ছোট শহর থেকেও সরাসরি ট্রেনে আসা যাবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় রেল।
১২) জলের তলায় ১০০ মিটার পর্যন্ত যেতে পারবে এমন আন্ডার ওয়াটার ড্রোনের ব্যবস্থা থাকছে।
১৩) আকাশ থেকে মেলাপ্রাঙ্গণকে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য মাটি থেকে ১২০ মিটার উপর পর্যন্ত উড়বে ড্রোন।
১৪) মেলার মূল এলাকার প্রতিটি প্রান্তে মোট ২,৭০০টি ক্যামেরা থাকবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে।
১৫) সিকিউরিটির কারণে শহরের প্রতিটি থানায় ৫৬ জনের বিশেষ সাইবার সেল তৈরি হয়েছে।
১৬) মেলায় ঢোকার সময় ফেশিয়াল রেকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে।
১৭) দর্শনার্থীদের থাকার জন্য ১,৫০,০০০ তাঁবু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাতে রয়েছে অতিরিক্ত টয়লেট এবং স্যানিটাইজেশনের সুবিধাও।
১৮) মেলায় মোট ৪,৫০,০০০ নতুন পয়েন্টে বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
১৯) প্রতি মাসে ১ লক্ষের বেশি অ্যাপার্টমেন্টে যত বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হয়, এই মহাকুম্ভে তার থেকেও বেশি বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।
২০) নতুন ৯৮টি স্পেশাল ট্রেন চালু করছে ভারতীয় রেল মহাকুম্ভ উপলক্ষে। যে ট্রেনগুলি মোট ৩,৩০০ বার যাতায়াত করবে মেলায়।
২১) নতুনভাবে সংস্কার করা হয়েছে ৯২টি সড়কপথ। তৈরি হয়েছে নতুন ৩০টি ব্রিজ।
২২) বহু অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসা এবং অপারেশনের সুবিধা থাকবে।
২৩) উত্তরপ্রদেশের অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। মহাকুম্ভতে ২ লক্ষ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।
২৪) কমপক্ষে ৪৫ কোটি দর্শনার্থীর সমাগম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
২৫) দর্শনার্থী পিছু কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করলে মোট ব্যবসা পেরোতে পারে ৪ লক্ষ কোটি টাকা। যা দেশের মোট জিডিপি'র ১ শতাংশ।
২৬) ২০১৯ সালের অর্ধকুম্ভ মেলাতে মোট ব্যবসা প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা।
২৭) অন্তত ১৫ লক্ষ বিদেশি পর্যটক এই মহাকুম্ভে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২৮) এই মহাকুম্ভে মোট ৩,০০০ অস্থায়ী রান্নাঘর থাকছে মেলাপ্রাঙ্গণে।
২৯) মহাকুম্ভের জন্য ১,৪৫,০০ বিশ্রামঘর বা রেস্টরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৩০) মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে মোট ১০০টি পার্কিং লট।