এজ ইস জাস্ট আ নম্বর...
বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়, বয়স কেবল মাত্র একটি সংখ্যা । সত্যিই তো তাই । জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রমাণ মিলেছে বারবার । বিশেষ করে প্রেমে । বয়স দেখে কি কখনও ভালবাসা হয় ? প্রেমে পড়তে তো লাগে একটা মুহূর্ত আর অনেকটা মুগ্ধতা, হৃদয়ের টান । প্রেমের ডিকশনারিতে জুড়েছে 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট'-ও । সেখানে বয়স কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না । কুড়িতেও যেমন প্রেম হতে পারে, তেমনই ৬০-এও । শুধু তাই নয়, প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে যে নারীকে পুরুষের থেকে ছোট হতে হবে, এমন ধারণাও কিন্তু এখন অতীত । বর্তমানে অসমবয়সী প্রেম, বিয়ে...এই কথাগুলোর সঙ্গে মানুষ ভীষণভাবে পরিচিত । আসলে, প্রেমের জোয়ারে ভালবাসার টানে যে খুলে যায় সব বাঁধন ।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পাঁচ বছরের অন্তত ব্যবধান থাকা প্রয়োজন । কিন্তু, বিজ্ঞান দেখে কি প্রেম হয়, নাকি বিয়ে ? টলিউডে এমন বহু তারকা জুটি আছেন, যাঁরা বয়সের বাধাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে চুটিয়ে প্রেম করছেন, সংসারও করছেন । কারও ১৫, কারও আবার ১৭...সে প্রসেনজিৎ-অর্পিতা হোক কিংবা কাঞ্চন-শ্রীময়ী, টলিপাড়া এমন জুটির উদাহরণ প্রচুর । আজকের প্রতিবেদনে দেখে নেওয়া যাক, কোন টলি কাপলদের বয়সের ফারাক কতটা ?
প্রসেনজিৎ-অর্পিতা
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রি । গত কয়েক দশক ধরে চুটিয়ে অভিনয় করছেন বাংলা সিনেমায় । ৬০ পেরিয়েও তিনি নায়কের ভূমিকায় । ছোটবউ, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ থেকে ২২ শ্রাবণ, জুলফিকার, দশম অবতার...টলিউডকে উপহার দিয়ে চলেছেন একের পর এক সিনেমা । চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন, গড়েছেন...তাইতো তিনি নিজেই আজ 'ইন্ডাস্ট্রি'।
প্রসেনজিৎ-এর জীবনে প্রেম এসেছে বহুবার । সেইসঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণাও । দুইবার বিয়ে ভেঙেছে বুম্বাদা-র । ১৯৯২ সালে দেবশ্রীকে বিয়ে করেছিলেন প্রসেনজিৎ । সেইসময় এই বিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল টলিউডে । কিন্তু, তিন বছর পরই ভাঙে তাঁদের সম্পর্ক । দেবশ্রী আর বিয়ের পিঁড়িতে না বসলেও প্রসেনজিৎ পরে অপর্ণা গুহঠাকুরতার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন নায়ক। কিন্তু আবারও বিচ্ছেদ, আবারও সেই একই পরিণতি । তারপর প্রসেনজিতের জীবনে এন্ট্রি হল অর্পিতার । সিনেমার সেটেই আলাপ, তারপর প্রেম । অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি জমল অফস্ক্রিনেও । ২০০২ সালে প্রায় ১৭ বছরের ছোট অর্পিতাকে বিয়ে করলেন প্রসেনজিৎ । তারপর তাঁদের জীবনে আসে ছেলে মিশুক । বন্ধন আরও দৃঢ় হয় । বিয়ের ২২ বছর পরও অর্পিতা-প্রসেনজিৎ-কে দেখলে মনে হয় একেবারে মেড ফর ইচ আদার । কাজের জন্য এক সঙ্গে সবসময় থাকা না হলেও সুযোগ পেলে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটান অর্পিতা ও প্রসেনজিৎ । বাবা-মা হিসেবেও ছেলেকে সময় দেন তাঁরা ।
দীপঙ্কর-দোলন
দীপঙ্কর দে ও দোলন রায় । টলিউডের অন্যতম চর্চিত জুটি । জানেন কি, দোলন কিন্তু দীপঙ্করের প্রায় হাঁটুর বয়সী । তবু, তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়েছেন । আবারও প্রমাণ করেছেন, ভালবাসার কোনও বয়স হয় না । তাঁদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য প্রায় ২৬ বছরের । দীর্ঘদিন চুটিয়ে প্রেম করেছেন । তারপর ২০২০ সালে সইসাবুদ করে আইনি বিয়ে সারেন তাঁরা । তবে, দীপঙ্করের এটা দ্বিতীয় বিয়ে । তাঁর আগের স্ত্রী ছিলেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান । দীপঙ্কর দুই মেয়ের বাবাও বটে ।
দোলন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, দীপঙ্কর তাঁর প্রথম স্ত্রীকে কোনওদিনও 'বাঙালি বউ' হিসেবে পাননি । সেই খামতি তিনিই পূরণ করার চেষ্টা করেন সবসময় । দোলনের কথায়,'আমি যখন আটপৌরি শাড়ি পরে পুজো করি, লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ি, তন্ময় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন দীপঙ্কর।' দোলন জানিয়েছেন, দীপঙ্করের জীবনে সায়রা বানু হয়ে থাকতে চান তিনি ।
গৌরব-দেবলীনা
টলিপাড়ার আরও এক জনপ্রিয় জুটি গৌরব-দেবলীনা । গৌরবের বোন মউ-এর বান্ধবী দেবলীনা । মউয়ের বিয়েতেই দু'জনের আলাপ । তারপর বন্ধুত্ব, ধীরে ধীরে তা প্রেমে পড়েন তাঁরা । যদিও, দেবলীনার আগে গৌরবের জীবনে ছিলেন অভিনেত্রী অনিন্দিতা বসু । বিয়েও হয়েছিল তাঁদের । কিন্তু, সে সম্পর্ক টেকেনি । বিয়ের তিন বছর পরই বিচ্ছেদ হয় তাঁদের ।
গৌরবের জীবনে আসে দেবলীনা । আড়াই বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর ২০২০ সালে করোনাকালে বিয়ে সারেন তারকা জুটি । দু'জনের মধ্যে বয়সের ফারাক প্রায় ৮ বছরের । চার বছর হতে চলল তাঁদের দাম্পত্য জীবন । গৌরবের সঙ্গে চুটিয়ে সংসার করছেন দেবলীনা । দু'জনেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত । তবে, কাজের ফাঁকে সময় পেলেই বেরিয়ে আসেন গৌরব-দেবলীনা ।
সপ্তর্ষি-সোহিনী
স্ত্রীর থেকে স্বামী বেশ বড়। কখনও কখনও বয়সের ফারাক ২৬-২৭ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে । এমন উদাহরণ তো ভুরি ভুরি । তবে এখন উল্টোটাও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ স্ত্রী তাঁর স্বামীর থেকে বড় । আর তার বড় উদাহরণ হলেন সোহিনী সেনগুপ্ত এবং সপ্তর্ষি মৌলিক । দু'জনে একসঙ্গে থিয়েটারে অভিনয় করতেন । সেখান থেকেই প্রেম । সপ্তর্ষি কিন্তু সোহিনীর থেকে প্রায় ১৪ বছরের ছোট । কিন্তু তাতে কি, বয়স দেখে কি আর দু'টি মন মেলে ?
সপ্তর্ষি জানিয়েছিলেন, তিনি সোহিনীর 'কথা'-র প্রেমে পড়েছিলেন । সোহিনীর জ্ঞান, দক্ষতা, শব্দচয়ন মুগ্ধ করেছিল তাঁকে । আর সোহিনী ? অভিনেত্রী যে আবার সপ্তর্ষির বিচক্ষণতায় মুগ্ধ । তাইতো এক সুঁতোয় বাঁধা পড়েন তাঁরা । তাঁদের প্রেম, বিয়ে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি । কটাক্ষেরও শিকার হয়েছেন তাঁরা । কিন্তু, তাঁরা যে একে অপরে মুগ্ধ । তাইতো সব কটাক্ষকে উপেক্ষা করে চুটিয়ে একসঙ্গে সংসার করছেন ।
কাঞ্চন-শ্রীময়ী
টলিপাড়ার আরেক চর্চিত জুটি কাঞ্চন-শ্রীময়ী । সদ্য বিয়ে সেরেছেন তাঁরা । চলতি বছর মার্চেই সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন । কিন্তু, তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার শেষ নেই টলি অন্দরে । বিয়ের পর থেকে কাঞ্চনকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় বইছে । ২৭ বছরের ছোট শ্রীময়ীকে বিয়ে করায় লাগাতর ট্রোল হতে হয়েছে কাঞ্চনকে । কিন্তু সেসবে কান দিতে রাজি নন কাঞ্চন । অভিনেতা যে তাঁর নতুন বউয়ে মুগ্ধ । চোখে হারাচ্ছেন শ্রীময়ীকে । আর শ্রীময়ী ? অভিনেত্রী বলছেন, কাঞ্চনের মতো স্বামী পেয়ে তিনি ধন্য । বিয়ের পর থেকে প্রতিটা উৎসব চুটিয়ে উপভোগ করছেন দু'জনে । একে অপরের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন তারকা জুটি ।
শ্রীময়ী কাঞ্চনের তৃতীয় স্ত্রী । এর আগে দু'টো বিয়ে ছিল কাঞ্চনের । কোনও বিয়েই শেষপর্যন্ত টেকেনি । গুঞ্জন রয়েছে, শ্রীময়ীর জন্যই কাঞ্চন-পিঙ্কি দাম্পত্যে চিড় ধরে । কিন্তু, বারবার প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন কাঞ্চন-শ্রীময়ী দু'জনেই । শ্রীময়ীকে কখনও কাঞ্চনকে ভাল বন্ধু বলেছেন, কখনও 'দাদা' বলে সম্বোধন করেছেন । কিন্তু, শেষপর্যন্ত প্রেমে তাঁরা পড়েই গেলেন ।
বয়সে পার্থক্য রয়েছে, টলিউডে এমন কাপলের সংখ্যা কিন্তু কাঞ্চন-শ্রীময়ীতেই শেষ নয় । সেই তালিকায় রয়েছেন সদ্য বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া রূপাঞ্জনা-রাতুল, ভরত কল-জয়শ্রী থেকে সুদীপ্তা-অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়, শ্রুতি-স্বর্ণেন্দু ও আরও অনেকে ।
