দুর্গাঅষ্টমী মানেই কুমারীপুজো। রাজ্যের সমস্ত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে চিরাচরিত রীতি মেনেই কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এছাড়াও বেশ কিছু বনেদি বাড়ির পুজো এবং পুরনো মন্দিরে কুমারী পুজোর চল আছে। কিন্তু কুমারী পুজো কী? কবে থেকে চালু হল এই পুজোর?
কুমারী পুজোর ইতিহাস
হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে, একসময় বানাসুর স্বর্গ, মর্ত, পাতাল দখল করে নিয়েছিল। সেই সময়ে বিপন্ন দেবগণ কালীর স্মরনাপন্ন হয়েছিলেন। দেবগণকে রক্ষা করতে স্বয়ং কালী কুমারীরূপে পুনর্জন্ম নেন। এবং দেবীর ওই কুমারী রূপের মাধ্যমেই বানাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই থেকেই কুমারী পুজোর প্রচলন । কথায় আছে, কুমারী পুজো সুখ, সমৃদ্ধি বয়ে আনে ।
কাদের কুমারী রূপে পুজো করা হয়?
১- থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু কন্যাদের এবং ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত কুমারী রূপে পুজো করা হয়। শুধু অষ্ঠমী নয়, সপ্তমী এবং নবমীর দিনেও কুমারী পুজো করা হয়ে থাকে।
কুমারী পুজোর নিয়ম
পুজোর আগে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয় । তারপর একেবারে প্রতিমার বেশে সাজানো হয় । পায়ে আলতা ও কপালে সিঁদুরের টিপ দেওয়া হয়। তারপর দেবী মূর্তির সামনে বসিয়ে আরাধনা করা হয় । পুজোয় দেবীকে যে ভোগ নিবেদন করা হয় সেই ভোগই অর্পণ করা হয় কুমারীর উদ্দেশেও । এরপর তার পায়ে ফুল দিয়ে প্রণাম করা হয়। এবং বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পুজো করা হয়।
কুমারীদের নাম-
বিভিন্ন বয়সী কুমারীদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সেগুলি হল, ১ বছরের কুমারী - সন্ধ্যা, ২ বছরের কুমারী - সরস্বতী, ৩ বছরের কুমারীর নাম ত্রিধামূর্তি, ৪ বছরের কুমারীর নাম কালিকা, ৫ বছরের কুমারী - সুভগা, ৬ বছরের কুমারী - উমা, ৭ বছরের কুমারী - মালিনী, ৮ বছরের কুমারী - কুষ্ঠিকা, ৯ বছরের কুমারী - কালসন্দর্ভা, ১০ বছরের কুমারী - অপরাজিতা, ১১ বছরের কুমারী - রূদ্রাণী, ১২ বছরের কুমারীর নাম - ভৈরবী, ১৩ বছরের কুমারী - মহালপ্তী, ১৪বছরের কুমারী - পীঠনায়িকা, ১৫ বছরের কুমারী - ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ১৬ বছরের কুমারী -অন্নদা বা অম্বিকা
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে কুমারী পুজোর ইতিহাস-
স্বামী বিবেকানন্দ মঠে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তিনিই কুমারী পুজো শুরু করেন। ১৯০১ সালে মা সারদার উপস্থিতিতে ৯জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই রীতি মেনে এখনও কুমারী পুজো হয়ে আসছে।
বেলুড় মঠে কুমারী পুজো-
নিয়ম রীতি মেনে বেলুড় মঠে সম্পন্ন হল অষ্টমীর কুমারী পুজো। এবার কুমারী হিসেবে পুজো করা হল বেলুড়ের বাসিন্দা শানভি মুখোপাধ্যায়কে। তার বয়স পাঁচ বছর। দূর্গা পুজোর বেদিতে সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই পুজো সম্পন্ন করেন মঠের মহারাজরা।
স্বামী বিবেকানন্দ মঠে দুর্গাপুজো শুরু করেন। তিনিই কুমারী পুজো শুরু করেন। ১৯০১ সালে মা সারদার উপস্থিতিতে ৯জন কুমারীকে পুজো করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। সেই রীতি মেনে এখনও কুমারী পুজো হয়ে আসছে।
জয়রামবাটিতে কুমারী পুজো-
অষ্টমীর দিন তিথি মেনেই জয়রামবাটিতে মা সারদার বাড়িতে সম্পন্ন হল কুমারী পুজো। এবার কুমারী রূপে পুজো করা হল ৫ বছর ৩ মাস বয়সী আরাধ্যা রায়কে। তার বাড়ি হুগলির সামন্তখণ্ড এলাকায়। অষ্টমীর দিন কুমারী পূজা দেখতে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করেন এই মন্দিরে ।। আড়ম্বর নয় মা সারদার জন্ম ভিটের দুর্গা পূজার মূল বিষয়বস্তু ভাব ও নিষ্ঠা । এই দুই বিষয় বজায় রেখে বছরের পর বছর ধরে দুর্গা পূজা হয়ে আসছে জয়রামবাটিতে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।