ছিল একুশে জুলাইয়ের প্রচার মঞ্চ। কিন্তু মঙ্গলবার ধূপগুড়ি ফুটবল ময়দান মাঠের মঞ্চ থেকে রাজ্য়ের আগামী পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের রূপরেখা কী হবে, তাও কার্যত ঠিক করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের ভাষণের শুরুতেই জেলা নেতৃত্বকে কার্যত কটাক্ষ করেই অভিষেক জানান, উত্তরবঙ্গের মানুষ তৃণমূলকে চান। কিন্তু তৃণমূলের নেতারা তাঁদের কাছে যান না। যার ফলেই এখানে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি।
এদিন ধূপগুড়ির জনসভায় যাওয়ার আগে দৌমহনির হাটে নামেন অভিষেক। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট সেখানে সময় কাটান। অভিষেককে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তার প্রতিফলন দেখা যায় ধূপগুড়ির মঞ্চে। অভিষেকের সাফ কথা, অনেক হয়েছে আর নয়। ব্যাংক ব্যালান্স দেখে নয়, মানুষের সার্টিফিকেট দেখে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা হবে। একইসঙ্গে তাঁর নির্দেশ, আগামী একুশে জুলাই কলকাতায় আসার সময় আনতে হবে রিপোর্ট কার্ডও।
আরও পড়ুন : ২০০ একর জমিতে শিল্পনগরী, তৈরি হবে কর্মসংস্থান, পাহাড়কে শান্ত রাখার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী
এক বছরের বেশি সময় হয়ে গেল বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে ভোটের ফল। এই একবছরে কতজন তৃণমূল নেতা স্থানীয় ব্লকে গিয়েছেন, তার রিপোর্ট একুশে জুলাই কলকাতায় দেখতে চেয়েছেন অভিষেক। কারণ, তিনি মনে করেন, দলীয় নেতাদের গাফিলতিতেই উত্তরের প্রায় প্রতি জেলায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। কিন্তু বাস্তব বলছে সাধারণ মানুষের কাছে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। স্রেফ তৃণমূল নেতাদের জন্যই দল জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বলেই এদিন দাবি করেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
হয় ঠিকাদারি করুন, না হলে তৃণমূল করুন। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার সভা থেকে এই বার্তাই দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তাঁর এই বার্তা বাংলার প্রতিটি তৃণমূল কর্মী, সমর্থকদের জন্য। যা এদিন ফের বুঝিয়ে দিলেন তিনি। ধূপগুড়ির মঞ্চ থেকে সাফ জানালেন, ঠিকাদারের কথায় পঞ্চায়েত চলবে না। পঞ্চায়েতের কথায় কাজ করবেন ঠিকাদাররা। যদি না পোষায়, তা-হলে তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিতে পারেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, ধূপগুড়ির মঞ্চ থেকেই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শুরু করলেন অভিষেক। তাই তিনি মনে করেন, কয়েকজনের মুখ দেখে আম জনতা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল। যাঁদের চিহ্ণিত করা হয়েছে বলেও দাবি অভিষেকের। গণতন্ত্রে মানুষ গণদেবতা বলে মনে করেন ডায়মণ্ড হারবারের সাংসদ। আর এই রায় মাথা পেতে মেনে নিতে হবে বলেও দলীয় নেতাদের সামনে শৃঙ্খলার লাইন টেনে দিলেন তিনি।
তাঁর দাবি, যতই প্ররোচনা হোক, বাংলা ভাগ তৃণমূল হতে দেবে না। তাই উত্তরবঙ্গের প্রতিটি তৃণমূল নেতাদের কাছে অভিষেকের অনুরোধ, আগামী ছয় মাসের মধ্যে জেলায় দলের ভিত মজবুত করতে হবে। প্রতিটি ব্লকে সবাইকে যেতে হবে। এবং মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হবে।