পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা। মহালয়া তিথির সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ও বাঙালির জীবন জুড়েই শুরু হয়ে যায় মাতৃ আরাধনা। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়ার তিথিকে ঘিরে বর্ণিত রয়েছে নানা কাহিনি। এই মহালয়ার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, এই দিনেই আঁকা হয় মায়ের চোখ। অর্থাৎ চক্ষুদান করা হয় মাতৃপ্রতিমার। আরজি কর আবহে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসবের মেজাজে নাগরিকসমাজ জুড়েই বেশ খানিকটা ভাঁটা। তবু, প্রতি বছরের মতোই এই বছরেও, মহালয়ার দিনে কুমোরটুলিতে থেমে নেই পুজো সংক্রান্ত শেষে মুহূর্তের প্রস্তুতি। চলছে চক্ষুদানও।
এখন ১০ দিনের পুজো। মহালয়া থেকেই অধিকাংশ প্যান্ডেল জুড়েই সাজো-সাজো রব। প্রায় সব প্রতিমার মূর্তি গড়ার কাজও সম্পূর্ণ। তবে আজও মহালয়ার সকালে নিয়ম করে একটি বা দু’টি ঠাকুরের চোখ আঁকেন শিল্পীরা।
'মহালয়া'। মহা ও আলয় জুড়ে এই শব্দ। সন্ধির নিয়ম মেনে শব্দটি সে ক্ষেত্রে হওয়ার কথা ছিল ‘মহালয়’। তা হলে ‘মহালয়া’ কেন? এর কোনও ব্যাকরণগত ব্যাখ্যা নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্ধকার পেরিয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হয় বলে শব্দটিকে স্ত্রীলিঙ্গ করে ‘মহালয়া’ বলা হয়।
নানা পৌরাণিক কাহিনির মিশেল রয়েছে এই দিনটিকে ঘিরে। তবে, মহাভারতের সঙ্গেও মহালয়ার একটি নিবিড় যোগ রয়েছে। মহাকাব্য অনুসারে, মহাভারতের যুদ্ধে মৃত্যুর পরে স্বর্গে কর্ণকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণ ও ধনরত্ন দেওয়া হলে তিনি দেবরাজ ইন্দ্রকে প্রশ্ন করেন যে, কেন তাঁকে খাদ্যের বদলে এ সব দেওয়া হয়েছে। ইন্দ্র তাঁর উত্তরে জানান, কর্ণ চিরকাল ধনরত্ন ও স্বর্ণ দান করে এসেছেন, কিন্তু পূর্বপুরুষদের কখনও জল, খাদ্য দেননি। তাই তাঁকেও খাদ্যের বদলে এ সবই দেওয়া হয়েছে।
মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী, কর্ণ তাঁর পুর্বপুরুষদের বিষয়ে অবগত ছিলেন না। তাই তাঁকে আবার ১৫ দিনের জন্য মর্ত্যে পাঠানো হয়েছিল পিতৃপুরুষের উদ্দেশে পিণ্ডদান করার জন্য। মহাভারত বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই থেকেই এই বিশেষ দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে জল দেওয়ার এই রীতি চালু হল।