শিলিগুড়ির একটি নামী বেসরকারি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের (Siliguri Rape) অভিযোগের ঘটনায় এবার হস্তক্ষেপ করল শীর্ষ আদালত (Supreme Court) । পুলিশের জালে আগেই ধরা পড়েছিল অভিযুক্ত সাগর ছেত্রী । অভিযোগ, এক পুলিশের মদতে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায় গুয়াহাটির বাসিন্দা এই যুবক । পরে গৌহাটি হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয় । এরপরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিতার পরিবার ।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলায় অন্যতম ‘পার্টি’করা হয়েছে রাজ্যকে । প্রথম শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয়, গৌহাটি হাইকোর্ট ‘ট্রানজিট’ জামিনের অপব্যবহার করেছে । সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তের দ্বিতীয় কোনও জামিনের আবেদন কোথাও গৃহীত হবে না । কিন্তু অভিযুক্ত এখন কোথায়, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি ।
ঠিক কী ঘটেছিল ?
ঘটনাটি ঘটে গত ২০ মার্চ । নির্যাতিতার দিদির বয়ান অনুযায়ী, ওইদিন তাঁর বোন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দুপুর নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোয় । প্রথমে তারা একটি শপিং মলে যায় । পরে, তাঁর বোনের এক বান্ধবীর পুরুষ বন্ধুরা তাদের একটি পানশালায় নিয়ে যায় । জানা গিয়েছে, ওই বান্ধবীর প্রেমিক হল সাগর ছেত্রী । অভিযোগ, সে জোর করে নির্যাতিতাকে মদ্যপান করায় । এরপর মাল্লাগুড়ির একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে যায় । সেখানেও চলে মদ্যপান । এরপর শরীর খারাপ হয়ে পড়ে নির্যাতিতার । এর মাঝে তার বান্ধবী অর্থাৎ প্রেমিকাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় সাগর । এরপর সেই সুযোগে ওই নাবালিকাকে হোটেলের ঘরে আটকে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ । পরের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ অভিযুক্ত সাগর নির্যাতিতাকে গাড়ি করে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ ।
আরও পড়ুন, SFI Mission Pritilata : নারীদের আত্মরক্ষার পাঠ শেখাতে এসএফআই-এর উদ্যোগ 'মিশন প্রীতিলতা'
পরিবারের কাছে সবটা খুলে বলেন শিলিগুড়ির ওই নির্যাতিতা । এরপর ২২ মার্চ শিলিগুড়ির প্রধান নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের লোকজন । মেডিক্যাল টেস্টেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায় । পুলিশি তদন্তে জানা যায়, অভিযুক্ত সাগর গুয়াহাটির বড় ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে । সে শিলিগুড়ি এবং সিকিমে পারিবারিক ব্যবসার দেখভাল করে । সেই সূত্রে শিলিগুড়ির উত্তরায়ণ এলাকায় তার বসবাস ।
এদিকে, ২২ মার্চের পর থেকে পলাতক ছিল সাগর । ধর্ষণে অভিযুক্তকে ধরতে গত ৩০ মার্চ শিলিগুড়ি পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয় । অসমের ধুবুড়ির একটি হোটেলে তার খোঁজ পাওয়া যায় । সে রাতেই তাকে ধুবুড়ি সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । কিন্তু অভিযোগ, ধুবুড়ি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার মদতে জেল থেকে সে ছাড়া পেয়ে যায় । অন্যদিকে, শিলিগুড়ি পুলিশের বিশেষ দলকে নানা আইনি জটিলতায় ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । যার ফলে হাতছাড়া হয়ে যায় ওই অভিযুক্ত ।
এরপর গুয়াহাটি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করে অভিযুক্ত । জামিন মঞ্জুরও হয় । সেই জামিনের নোটিস অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আসেনি । সাগরের জামিনের মেয়াদ ছিল গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত । সেই মেয়াদ শেষ হতেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে নির্যাতিতার পরিবার ।