কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর (Laxmi Puja 2022) দিন যখন বাংলার ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মীর আরাধনা চলছিল, তখন বাংলার অপর প্রান্ত পালিত হয় 'আভড়াপুণেই' ( Avrapunei Utsav) বা অব্যূঢ়া পূর্ণিমা উৎসব । দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশেষ করে সুবর্ণরেখার উভয় তীরে এই উৎসব পালিত হয় । এই লিঙ্গবৈষম্যহীন লৌকিক উৎসব অব্যূঢ়া বা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের জন্য । তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে ভাল জীবনসঙ্গী পায়, সেই কামনা করেই মা, দিদা, ঠাকুমারা এই উৎসব পালন করেন ।
উৎকল সংস্কৃতি বা ওড়িশার রীতির প্রভাব এই উৎসবে লক্ষ্য করা যায় ।ওড়িশার "কুমার পূর্ণিমা"-র প্রভাব রয়েছে এই উৎসবে । 'আভড়াপুণেই'উৎসবে বেশ কিছু রীতি-নীতি রয়েছে । কীভাবে এই উৎসব পালন করা হয়, দেখে নেওয়া যাক...
আরও পড়ুন, Haridebpur Murder Update: ভোঁতা-শক্ত জিনিসের আঘাতেই মৃত্যু অয়নের, পুলিশের হাতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
উৎসবের দিন স্নান করে নতুন পোশাক বা নতুন ঘুনশী কোমরে পরতে হয়। স্নানের পরে মা, দিদিমা অথবা ঠাকুমারা অবিবাহিত সন্তানের মঙ্গলকামনায় কপালে চন্দনের মঙ্গল টীকা পরিয়ে দেন। মাথায় ফুল, দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন মায়েরা । আগের দিনে মা-ঠাকুমারা অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের আশীর্বাদ করে বলতেন "পো মেনেকার নিশ বাঢ়ু" অর্থাৎ ছেলেদের গোঁফ বাড়ুক ,আর বলতেন "ঝি মেনেকার আইস বাঢ়ু" অর্থাৎ মেয়েদের আয়ু বাড়ুক। এদিন,বাড়িতে পিঠে,পায়েস, লুচি, সুজি নানারকম নিরামিশ পদ তৈরি হয় । উৎসবের দিন অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের "ভুজা" বা মুড়ি খাওয়া বারণ । মুড়ি খেলে এই ব্রত অসম্পূর্ণ থেকে যায় ।
অবিবাহিত ছেলেমেয়ে,যাঁদের বয়স একটু বেশি তাঁরা অনেক সময় এদিন ব্রত রাখেন । মনের মতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার জন্য উপোস করেন । অনেকের মতে,চাঁদের মতো সুন্দর জীবনসঙ্গী বা জীবনসঙ্গীনি পাওয়া এই ব্রতর লক্ষ্য। পূর্ণিমার চাঁদ দেখার পর তুলসী গাছে জল ঢেলে এই ব্রত শেষ হয় । যদিও, এখন তুলসী গাছে জল ঢালার রীতি সেভাবে কেউ পালন করে না ।
নিয়ম-রীতি মেনে আজও ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় চলে আসছে "আভড়াপুণেই" উৎসব । যদিও, আধুনিকতার ছোঁয়ায় উৎসবের জৌলুষ বা আচার এখন অনেকটাই ফিকে ।