৩ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, পেরিয়ে গিয়েছে ১১ দিন। শোকজের উত্তর না দেওয়া সত্ত্বেও সন্দীপ ঘোষের রেজিস্ট্রেশন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল বাতিল করল না কেন, প্রশ্ন তুলল সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন আইএমএ-র রাজ্য সভাপতি দিলীপকুমার দত্ত এবং রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে কেন কাউন্সিলের সংবিধান মেনে সন্দীপের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়নি এতদিন পরেও। 'ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঊর্ধ্বে উঠে' দ্রুত রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর, আরজি করের ঘটনায় হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে শোকজ নোটিস পাঠায় রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শোকজের উত্তর চাওয়া হয়েছিল। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের আইন অনুযায়ী কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাঁকে শোকজ নোটিস পাঠাতে পারে রাজ্য, শোকজের উত্তর মনঃপুত না হলে ওই ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারে রাজ্য। কিন্তু সন্দীপ ঘোষের ক্ষেত্রে তেমন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি এখনও।
কোনও চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন দু'টি কারণে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাতিল করা সম্ভব। এক, কেউ যদি কোনওরকম চক্রান্তে যুক্ত থাকার অপরাধে আদালতে দোষী প্রমাণিত হন এবং দুই, কোনও অপরাধমূলক কাজে নাম জড়ানোর ফলে জনসমাজে যদি তাঁর বদনাম হয়ে থাকে। তবে দু'টি ক্ষেত্রেই শোকজ় না করে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা যায়না। তাই সন্দীপকেও শোকজ় করা হয়েছিল। শোকজের উত্তর দেওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, ৭২ ঘণ্টা অর্থাৎ ৩ দিন, কিন্তু বাস্তবে পেরিয়েছে ১১ দিন। সন্দীপ ঘোষের তরফে এখনও শোকজ়ের জবাব আসেনি।
ঘটনাচক্রে, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সুদীপ্ত রায় তৃণমূল বিধায়ক। শান্তনু সেনও তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ তথা প্রাক্তন মুখপাত্র। শান্তনুকে সরিয়ে আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল সুদীপ্তকে। সন্দীপ এবং সুদীপ্ত একই পক্ষের বলে খবর। আবার, শান্তনু সেন বরাবরই সন্দীপ ঘোষের বিরোধী হিসেবেই পরিচিত। সন্দীপ সিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সমাজমাধ্যমেও সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করেছেন শান্তনু সেন।
শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সদস্য। আরজি কর-কাণ্ডে সুদীপ্ত রায়ের বিটি রোড, উত্তর কলকাতার উত্তর কলকাতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। একইসঙ্গে বিধায়কের বাড়ি লাগোয়া তাঁর মালিকানাধীন একটি নার্সিং হোমেও অভিযান চালিয়েছে ইডি । বেশ কয়েকদিন ধরেই ইডির ব়্যাডারে রয়েছেন সুদীপ্ত রায়। দুর্নীতি মামলায় আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন হলে সুদীপ্ত ।
আরজি কর হাসপাতালে ডিউটিরত মহিলা চিকিৎসকের খুন এবং ধর্ষণের খবর সামনে আসার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন তিনি। অবশ্য তার আগেই ১ সেপ্টেম্বর আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির কারণে সন্দীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই। ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে তোলা হয়েছিল সন্দীপকে, আরও ৩ দিনের সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন সন্দীপ।
সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে রোজই নতুন কোনও না কোনও তথ্য সামনে আসছে। এবার সিবিআই স্ক্যানারে সন্দীপের প্রাইভেট প্র্যাকটিস! সেখানকার প্রেসক্রিবশনে সন্দীপের রাজিস্ট্রেশন নম্বরের উল্লেখ থাকত না বলেই অভিযোগ। এমন কী পুরো নামও নাকি থাকত না, বদলে উল্লেখ থাকত ডঃ এস ঘোষ।
সম্প্রতি সন্দীপের বিরুদ্ধে হংকং-এর এক পুরুষ নার্সকে বছর সাতেক আগে যৌন হেনস্থার অভিযোগের খবর নতুন করে সামনে এসেছে। এবার সন্দীপের ল্যাপটপ ঘেঁটে সিবিআই আধিকারিকরা একাধিক পুরুষের নগ্ন ছবি পেয়েছেন বলে খবর। এ ছাড়াও বহু আর্থিক লেনদেনের এক্সেল শিট পাওয়া গিয়েছে ল্যাপটপ থেকে।