আরজি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, শুক্রবার সন্দীপের আবেদন খারিজ করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
কোন যুক্তিতে আবেদন খারিজ?
আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি মামলাএবং মূল যে ধর্ষণের মামলা একসঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে, তাতে আপত্তি জানান সন্দীপ। মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানাল, যে মামলায় তিনি নিজে অভিযুক্ত হয়ে সিবিআই হেফাজতে, সেই মামলা নিয়ে আপত্তি জানানোর কোনও এক্তিয়ার সন্দীপের নেই।
সন্দীপের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করে মামলা করেছিলেন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অ্যাসিসট্যান্ট সুপার আখতার আলি। সেই মামলায় ২৩ অগস্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন সন্দীপ ঘোষ।
কলকাতা হাইকোর্ট তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতির সঙ্গে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার যোগ থাকতে পারে। এই পর্যবেক্ষণেই আপত্তি জানিয়ে, সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা প্রশ্ন করেন, আর্থিক অনিয়মের তদন্তের সঙ্গে খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে কেন। প্রশ্ন শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, এত উতলা হওয়ার কী আছে? ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সময়ে সন্দীপ ঘোষ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন, সুতরাং দু'টি ঘটনার মধ্যে যোগ থাকতে পারে, হাইকোর্ট এমনটা বলে থাকলে অসুবিধে নেই, তদন্ত চলতে পারে। শুনানি চলাকালীন প্রধানবিচারপতি এও মনে করিয়ে দেন, হাইকোর্ট রায় দেয়নি, শুধু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। পালটা অভিযুক্ত সন্দীপের আপত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।
সিবিআই হেফাজতে থাকা সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী মীনাক্ষী অরোরা আখতার আলির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। আখতার আলিকে আরজি কর হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদে ট্রান্সফার করে দেওয়া হয়েছে বলে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে তিনি সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন উল্লেখ করেন মীনাক্ষী। তার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, আখতার আলির উদ্দেশ্য এই মামলার বিচার্য বিষয় নয়। আর্থিক অনিয়ম হয়েছে কিনা, এবং হয়ে থাকলে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে তার কোনও যোগ রয়েছে কিনা, সেটাই এ ক্ষেত্রে বিচার্য। রাজ্য সরকার চাইলে আখতার আলির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করতে পারে।
আরজি কর হাসপাতালে ডিউটিরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের দায়ের করা সুয়ো মোটো মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল গত ৫ সেপ্টেম্বর। তা পিছিয়ে সোমবার করা হয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর সেই শুনানির দিন আদালতে স্ট্যাটাস রিপোর্ট পেশ করার কথা সিবিআইয়ের। তদন্ত কতটা এগিয়েছে তা মুখ বন্ধ খামে সুপ্রিম কোর্টকে জানাবে সিবিআই। তার আগে সন্দীপের কোনও আর্জি শুনতে রাজি নয় সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, দু’জনেরই পর্যবেক্ষণ, একজন অভিযুক্ত কখনওই তদন্তের গতিপ্রকৃতি কীভাবে এগোবে তা নিয়ে নির্দেশ দিতে পারেন না।
উল্লেখ্য টানা ১৬ দিন জেরার পর আর্থিক অনিয়মের অন্য একটি মামলায় সন্দীপকে গত সোমবার রাতে গ্রেফতার করে সিবিআই। মঙ্গলবার সন্দীপের ৮ দিনের সিবিআই হেফাজত হয়। এই পরিস্থিতিতে, শুক্রবার সকালে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে হানা দিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট।
সন্দীপ ঘোষের মেয়াদকালে আরজি কর হাসপাতাল থেকে রাতারাতি উধাও ১৮৬টি শয্যা! কীভাবে শয্যাগুলি ‘ভ্যানিশ’ হল, তার উত্তর স্পষ্ট নয় এখনও। তবে এই ভুল ইচ্ছাকৃত কিনা, বং বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য-দুর্নীতির সঙ্গে এর যোগ রয়েছে কিনা, তা-ও স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং ন্যাশনাল অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশন আগেই সাসপেন্ড করেছিল সন্দীপকে। সিবিআই এর হাতে গ্রেফতারির পর সন্দীপকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।