আরজিকর কাণ্ডে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। এর মধ্যেই যৌন হেনস্থার বিস্ফোরক অভিযোগ প্রকাশ্যে এল আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। কলকাতা, রাজ্য কিংবা দেশে নয় সুদূর হং কংয়ের এক পুরুষ নার্সকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে।
২০১৭ সালে হং কংয়ের কাউলুনের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের এক নার্সিং পড়ুয়ার শরীরে আপত্তিকর ভাবে হাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই নার্সিং পড়ুয়া।
অভিযোগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেই সময় গ্রেফতারও করা হয়েছিল তৎকালীন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অর্থাৎ বর্তমান আরজিকর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। দিন কয়েক হেফাজতেও থাকতে হয়েছিল।
সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নামের এক পোর্টালে। সম্প্রতি সাত বছর আগের ওই খবরই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। জানা গিয়েছে, চিকিৎসা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানের জন্য হং কংয়ে গিয়েছিলেন সন্দীপ। যদিও ওই সফরে সরকারের কোনও অনুমতি ছিল না বলেই জানা গিয়েছে।
কী লেখা হয়েছিল সাত বছর আগের ওই প্রতিবেদনে?
'সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট'-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল হং কংয়ের কাউলুনের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের এক নার্সিং পড়ুয়ার পোশাক পরিবর্তনের সময় তাঁর বাঁ দিকের পশ্চাৎভাগে চাপড় মারেন সন্দীপ ঘোষ। এরপর নাকি সেই পড়ুয়ার গোপনাঙ্গেও হাত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর ওই পড়ুয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ডু ইউ লাইক দিস?’
অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দীপ ঘোষকে দিন কয়েক গরাদের ওপারে কাটাতে হয়। এরপর আদালরে তোলা হলে সন্দীপ জানান, শোল্ডার ডিসলোকেশনের সমস্যার হাতে কলমে ওই পড়ুয়াকে পাঠ দিচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এই সমস্যার সমাধানের পরে তিনি বলেছিলেন, 'ডু ইট লাইক দিস।' আদলতে সন্দীপের দাবি ছিল, নিছকই ভুল বোঝাবুঝির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছিল। যদিও আদালতে সেই অভিযোগকারী নার্স অভিযোগ করেছিলেন, সন্দীপ ঘোষ একাধিকবার তাঁর নিতম্ব ছুঁয়েছিলেন।
এরপর আদালতে সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, সকাল ৭ টার শিফটের ডিউটি ছিল ওই নার্সিং পড়ুয়ার। কিন্তু দেরিতে পৌঁছেছিলেন তিনি। সেই কারণে শাস্তির মুখে পড়তে হত তাঁকে। তাই নিজের শাস্তি কমাতে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলেছিলেন হং কংয়ের ওই নার্সিং পড়ুয়া। তবে, দেরি করার বিষয়টি মেনে নিলেও ওই পড়ুয়া দাবি করেছিলেন, যৌন হেনস্থার অভিযোগ মিথ্যে নয়।
উল্লেখ্য, আরজি-কর কাণ্ডের ২৪ দিন পর গ্রেফতার কড়া হয়েছে ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টানা ১৫ দিন ধরে টানা জেরা করে তবেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যদিও আরজিকর কাণ্ডে নয়, সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতি মামলায়।
গ্রেফতারির পরেই স্বাস্থ্য দফতর সাসপেন্ড করেছে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। ইতিমধ্যে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তিন দিনের মধ্যে সেই সবের যথাযথ কারণ দর্শাতে হবে তাঁকে। নাহলে তাঁর লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।