আর জি কর কাণ্ডের তদন্তে নেমে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে সিবিআই । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নজরে রয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী, বিধায়ক, কাউন্সিলর । সোমবারই আর জি কর কাণ্ডে পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকে তলব করেছিল সিবিআই । ৯ অগস্ট অর্থাৎ ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর দিন হাসপাতালে গিয়েছিলেন নির্মল ঘোষ । দেহ দ্রুত সৎকারে তাঁর ভূমিকা ছিল কি না, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিধায়ককে । সোমবার প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সিজিও থেকে বেরিয়ে যান নির্মল ঘোষ । পরে তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ঘটনার দিন সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন । সমস্ত ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখেছিলেন । তবে, সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর কোনও কথাই হয়নি । শুধু মাত্র স্বাস্থ্যকর্তা-ব্যক্তি ও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন । কেবল নৈতিক দায়িত্ব থেকেই সেদিন হাসপাতালে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন । একইসঙ্গে নির্যাতিতার বাবা-মা-কে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তৃণমূল নেতা ।
ঘটনার শুরু থেকেই নির্যাতিতার বাবা-মা অভিযোগ করে এসেছেন, মেয়ের দেহ 'তাড়াহুড়ো' করে সৎকার করা হয়েছে । নির্যাতিতার বাবা-র অভিযোগ, ঘটনার রাতে প্রথমবার ময়নাতদন্তের পর দেহ যখন আরজি কর থেকে বার করে নিয়ে আসা হয়, তখন ঠিক তদন্তের জন্য় দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত চেয়েছিলেন তাঁরা । কিন্তু, তাঁদের কথা শোনা হয়নি । দেহ দাহ করতে তাঁদের একপ্রকার বাধ্য করা হয়েছে । পানিহাটির বিধায়কের তত্ত্বাবধানেই সেদিন দেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয় । এবার এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন নির্মল ঘোষ । তাঁর দাবি, "সেদিন যদি নির্যাতিতার বাবা বাড়িতে বলতেন আমি আমার মেয়ের মরদেহ রেখে সংরক্ষণ করতে চাই। পোস্টমর্টেম করতে চাই তাহলে আমি রেখে দিতাম। কিন্তু তিনি এসব কথা কাউকেই বলেননি।"
নির্মল ঘোষ আরও বলেন, "এই সব কথা যাঁদের দিয়ে বলাচ্ছেন, আন্দোলনের রেশ তাঁদের হাতে নেই। রেশ আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সাধারণ মানুষ চায় বিচার হোক অভিযুক্তের।"
সোমবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের অফিসে বেলা ১১টা নাগাদ পৌঁছন নির্মল ঘোষ । সেইসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, কিছু নথি জমা দিতে এসেছেন তিনি । এছাড়া সিবিআইকেও কিছু কথা বলার রয়েছে তাঁর । তারপর থেকে টানা সাড়ে ৬-৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলে । সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মল ঘোষের মোবাইল ফোনও খতিয়ে দেখা হয়। তাঁর থেকে জানতে চাওয়া হয়, তরুণী চিকিৎসকের যেদিন দেহ সৎকার করা হয়েছিল, সেদিন কার কার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন তিনি। কারও থেকে কোনও নির্দেশ তাঁর কাছে এসেছিল কিনা! তিনি কাউকে কোনও নির্দেশ দেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে । তাঁর অনেক কথা বলার ছিল, সিবিআইয়েরও অনেক কথা জানার ছিল । সেই কারণেই দু'পক্ষ অ্যাপয়েনমেন্ট করি। সেই কথাগুলো জনসমক্ষে বলার মতো নয়। তাই বলা যাবে না । তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় যারা দোষী তাদের ফাঁসি হোক । সিবিআইয়ের কাছে অভিযুক্তের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি ।