রাজপথে তখন চলছে ছাত্রসমাজের নবান্ন অভিযান । একদিকে আন্দোলনকারীরা আরেকদিকে পুলিশ । মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে কখনও টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ, কখনও জলকামান ছুঁড়ছে । তবে, সব কিছু উপেক্ষা করে পুলিশের জলকামানের সামনে অবিচল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যক্তি । গেরুয়া বসন, হাতে জাতীয় পতাকা...ছাত্রসমাজের আন্দোলনে একজন বৃদ্ধ । নবান্ন অভিযানে দিনভর আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সেই বৃদ্ধ ব্যক্তিই । কে তিনি, জানেন ?
ব্যক্তির নাম বলরাম বসু বা প্রবীর বসু । নিজেকে শিক্ষক হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন । একইসঙ্গে তিনি একজন ফটোগ্রাফার বা চিত্রগ্রাহক । সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে এখন শুধু তাঁরই নাম । অনেকে তাঁকে রামায়ণের জটায়ুর সঙ্গে তুলনা করছেন । অনেকে আবার তাঁকে বীর, উত্তম পুরুষ রূপে সম্বোধন করছেন । সেই বলরাম বসুকে নতমস্তকে প্রণাম জানাচ্ছেন নেটিজেনদের একাংশ । অমিত মালব্য বলেছেন,'মমতার শাসনকালে প্রতিবাদের চূড়ান্ত প্রতীক' । তবে, শুধু প্রশংসা নয়, সমালোচনা করেছেন অনেকে । যে নারীর সম্মানের দাবিতে তিনি পথে নেমেছিলেন, সেই নারীদের রোষেই পড়েছেন প্রবীর বসু । কেন ?
পুলিশ যখন জলকামানব ছুঁড়ছিল, সেইসময় কিছু অঙ্গিভঙ্গি করেছিলেন ওই ব্যক্তি । পুলিশকে 'চুড়ি পরে বসার' নিদান দিয়েছিলেন । আর এই বিষয়টাকে নিয়েই সরব হয়েছেন মেয়েরা । তাঁদের দাবি, 'অগোচরেই নারীজাতিকে 'দমিয়ে রাখা'-র যে প্রবৃত্তি ফুটে উঠেছে ওই ব্যক্তির মধ্যে ।' "চুড়ি পরে থাক", এটা মানেই নারীদের অপমান করা । সেই অপমানের জবাব দিতে এবার আওয়াজ তুলছেন নারীরা, 'চুড়ি পেহেনকে হাল্লা বোল / শাড়ি পেহেনকে হাল্লা বোল...'।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে কেউ লিখেছেন, 'যারা 'চুড়ি পরে থাক' বলে মেয়েদের শক্তিকে অপমান করে, সেই পুরুষ গুলো কি কালীর এই চুড়ি পরা রুপ দেখে নি?' কেউ লিখলেন, 'চেঁচিয়ে যেভাবে পুলিশকে বলা হয় হাতে চুড়ি পরে থাক!! এটা পরোক্ষ ভাবে মেয়েদেরই তাচ্ছিল্য করা নয় কি??' রূপম ইসলামের স্ত্রী রূপসা দাশগুপ্ত লেখেন, 'চুড়ি পরে বসে থাক… ওয়াহ! ওয়াহ! এই সব কথাই যদি না থামে, তবে কীসের এত আন্দোলন।'
ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সব মহলে । অনেকেরই প্রশ্ন ছাত্র কোথায়? কারণ নবান্ন অভিযানে ছাত্র কম, বরং রাজপথ দখল নিয়েছে মাঝবয়সি থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও । যা নিয়ে সব মহলেই নিন্দার ঝড় বইছে ।