থিম বনাম সাবেকের যে হালকা দোলাচল, তা বরাবরই বজায় থেকেছে বাংলার দুর্গোৎসবে। এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। শিল্পীদের ভাবনায় অসংখ্য থিম মাথা তোলে এই দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে, যা দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হয় যে মানুষ এভাবেও ভাবতে পারে! অন্যদিকে দিনের পর দিন ধরে একইভাবে চলে আসা, সাবেক পুজোগুলোর দিকে তাকালেও মনে হয় এই ঐতিহ্য কখনও পুরনো হওয়ার নয়।
এমনই এক পুজোর উদাহরণ নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির পুজো। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাসভবনের এই পুজো আজও প্রথা মেনে চলে আসছে একই ভাবে। গোপাল ভাঁড়ের এই শহরে আজও দুর্গাপুজো বলতে এই রাজবাড়ীর পুজোই। এই শহরবাসী ‘শারদীয়া’ বলতে বোঝে জগদ্বাত্রী পুজোকেই। শহরের প্রাণকেন্দ্রে কিন্তু রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর এক অন্য গুরুত্ব রয়েছে।
শহরে সবচেয়ে আগে পুজো শুরু হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতেই। এবারেও তাঁর অন্যথা হল না। চিরাচরিত প্রথা মেনে প্রতিপদের দিন থেকেই জ্বলে উঠল কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির হোম কুণ্ড। পরিবার তথা নদিয়াবাসীর মঙ্গলকামনায় এই হোম কুণ্ড জ্বালানো হয়, যা জ্বলে নবমী পর্যন্ত।
শাক্ত মতে প্রাচীন ধর্মীয় রীতিনীতিকে বজায় রেখে হোম যজ্ঞের মধ্যে দিয়ে বৃহস্পতিবার শুভ সূচনা হল। এখানে দেবী রাজরাজেশ্বরী নামে পরিচিত। তাঁর বাহন ঘোটকে। পুরনো রীতি বজায় রেখে বেল কাঠ ও ঘৃতাহুতির মাধ্যমে হোম কুণ্ড প্রজ্বলন করে রাজরানী অমৃতা রায়, এবং বর্তমান রাজার উপস্থিতিতে পুজো শুরু হয়।
অভয়া কাণ্ডের প্রতিবাদ স্বরূপ দেবীর পাশে কালো কাপড়ের প্রতীকি অভয়া নির্মাণ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানোর একটি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে রাজবাড়িতে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো । রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের হাত ধরেই এখানে শুরু হয় দুর্গাপুজো । কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোর একটা বিশেষত্ব রয়েছে প্রতিমায় । অন্যান্য প্রতিমার মতোই দেবী দশভূজা । একচালা প্রতিমার পিছনে আঁকা থাকে দশমহাবিদ্যা । রাজবাড়ির অন্দরেই তৈরি হয় প্রতিমা।