Nadia Kali Puja: পুজোর দিনেই হয় চক্ষুদান, একইদিনে বিসর্জন! আগমেশ্বরী কালীর অলৌকিক কাহিনি জানেন?

Updated : Oct 30, 2024 12:22
|
Editorji News Desk

আলোর উৎসব, দীপাবলি। এই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মহাধুমধামে কালীর আরাধনা করা হয়। ঐতিহ্য মিলেমিশে থাকা একেকটা পুজোর ইতিহাস শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠতে পারে। শান্তিপুরের আগমেশ্বরীর পুজো এমনই এক ইতিহাসের বাহক।  আনুমানিক ৪০০ বছরের পুরানো এই পুজো।  এই পুজো শুরু করেছিলেন সার্বভৌম আগমবাগীশ, তিনি ছিলেন  তন্ত্রসার গ্রন্থ সংকলনের লেখক পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের প্রপৌত্র।  তিনিও ছিলেন একজন তন্ত্র সাধক। এই আগমবাগীশ উপাধি তাঁদের পাওয়া। কারণ তাঁরা ছিলেন আগমশাস্ত্রজ্ঞ।  


তন্ত্রসাধক আগমবাগীশদের নামানুসারে পরে এই দেবী 'আগমেশ্বরী' নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এই আগমবাগীশরা ছিলেন শাক্ত। কিন্তু সেই সময় পরিস্থিতি ছিল অন্যরকম। সমাজে শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে বিরোধ ছিল চরমে। কিন্তু শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্যের পুত্র মথুরেশ গোস্বামী চেয়েছিলেন শাক্ত এবং বৈষ্ণবদের মধ্যে এই বিরোধ এবং দূরত্ব মিটিয়ে ফেলতে। নবদ্বীপের বাসিন্দা ছিলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। তাঁর প্রপৌত্র সার্বভৌমর সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন শান্তিপুরের অদ্বৈতাচার্য্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী। তিনি চেয়েছিলেন শক্তি এবং ভক্তিকে মিলিয়ে দিতে। 

তবে এই সিদ্ধান্ত খুব একটা সুখকর হয়নি। ঝগড়া অশান্তি অচিরেই বাড়তে থাকে তাঁদের সংসারে। তদানীন্তন শাক্ত সমাজে এই বিয়ে মোটেই ভাল ভাবে নেওয়া হয়নি। এরপরেই মথুরেশ গোস্বামী তাঁর মেয়ে জামাইকে নবদ্বীপ থেকে শান্তিপুরে নিয়ে আসেন। 


কিন্তু সার্বভৌম ছিলেন শাক্ত উপাসক। কিন্তু বড় গোস্বামী বাড়িতে সরাসরি শাক্ত উপাসনা করা যেত না। তাই মথুরেশ গোস্বামী শান্তিপুরে তাঁর বসতবাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে দেন জামাইয়ের জন্য। ওখানেই ধ্যান করে সিদ্ধিলাভ করেন সার্বভৌম। তিনি ধ্যানযোগে তাঁর আরাধ্যা দেবীর মূর্তি দেখেছিলেন।


স্বপ্নে কী দেখেছিলেন সার্বভৌম? 

ধ্যানযোগে তিনি দেবীর আদেশ পান। কথিত রয়েছে, তাঁর কাছে দৈব্য আদেশ ছিল পরের দিন প্রত্যুষে তিনি প্রথম যাঁকে দেখতে পাবেন , তিনিই হবেন তাঁর আরাধ্যা দেবী। সেই অনুযায়ী সার্বভৌম পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে দেখেন কালো এক কন্যা একহাতে গোবর নিয়ে অন্য হাতে ঘুটে দিচ্ছে দেওয়ালে। তাঁকে দেখে মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে জিভ কাটে লজ্জায়। দৈব্য নির্দেশে তিনি গঙ্গা থেকে মাটি নিয়ে এসে মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করেন তারপরই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে দেন ৷


বাইট 


পুজোর দিনেই চক্ষুদান: 

সেই থেকে আজ পর্যন্ত একইভাবে চলে আসছে আগমেশ্বরীর পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু রীতি নিয়ম বদলাতেও হয়েছে। সার্বভৌমের নিয়মানুযায়ী একদিনে মূর্তি তৈরি করা হত আগমেশ্বরীর, কিন্তু এত বড় মূর্তির কাজ শেষ করা বেশ সময়সাপেক্ষ বলে কৃষ্ণপক্ষ পড়ার পর মূর্তির কাজ শুরু হয়। পুজোর দিন মৃৎশিল্পী চক্ষুদান করেন, তারপরই শুরু হয় পুজো। এবং পুজো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘট বিসর্জন হয়ে যায়। পরে মূর্তি নিরঞ্জন হয়। শান্তিপুর তথা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত, বহু দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই দেবীর দর্শনে। 


আগমেশ্বরীর সাজ: 

প্রায় ১৩ ফুটের বিরাট মাতৃমূর্তি। ভক্তদের দেওয়া সোনা-রুপোর অলঙ্কারে মায়ের সাজ সম্পূর্ণ হয়। বিসর্জনেও রয়েছে বিশেষ চমক। মাতৃ মূর্তির উচ্চতা বেশি হওয়ায়, বিসর্জনের পথের সব রাস্তার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রাচীন এই পুজোর বয়স বাড়ছে আরও, কিন্তু ভক্তি এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে এই পুজো আজও স্বতন্ত্র। 

Kali Puja

Recommended For You

editorji | লোকাল

Digha Jagannath Temple : চিনা বাতির রোশনাইয়ে ঝলমলে দিঘা, জগন্নাথ মন্দিরে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা তুঙ্গে

editorji | লোকাল

Patharpratima Blast: বাজি কারখানায় পরপর বিস্ফোরণ, মৃত্যু ৪ শিশু-সহ ৮ জনের, আটক অভিযুক্ত

editorji | লোকাল

Holi 2025: রঙে হবে না ক্ষতি, শাক-ফুল দিয়ে রঙ বানাচ্ছেন হর্টিকালচার বিভাগের পড়ুয়ারা-গ্রামের মহিলারা

editorji | লোকাল

HS Exam 2025 : মেদিনীপুর, কোচবিহারে উত্তেজনা, ছাত্র ধর্মঘটের মধ্যেই রাজ্যে উচ্চ-মাধ্যমিকের পরীক্ষা

editorji | লোকাল

Panagarh Accident Case : ‘পালিয়ে ছিলাম ভয় পেয়ে’, পানাগড়ের ঘটনায় দাবি ধৃত বাবলুর